গত ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। আর তারপর থেকেই স্তব্ধ ভূস্বর্গ। সেখানের পরিস্থিতি বিচার করে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে সতর্ক করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কাশ্মীরের জনমনে ক্রোধ চরম পর্যায়ে রয়েছে। যে কোনও সময় সেই ক্রোধের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটতে পারে ব্যাপক হিংসাত্মক কার্যকলাপে।
ফলে কাশ্মীর প্রশ্নে শাঁখের করাতের দশা নরেন্দ্র মোদী সরকারের। নিরাপত্তায় ছাড় দেওয়ায় অসম্ভব, আবার কত দিন এ ভাবে উপত্যকাকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে রাখা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরে। শোনা যাচ্ছে, এই কারণে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে উপত্যকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য এক গুচ্ছ ঘোষণা করার পথে হাঁটতে পারে সরকার। আস্থা অর্জনে দ্রুত সরকারি চাকরিতে ব্যাপক সংখ্যায় স্থানীয়দের নিয়োগের বিষয়টিও নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে মন্ত্রীসভা।
তবে সরকারের অভ্যন্তরে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আর কত দিন থাকবে আধাসেনা? সেই প্রশ্নে কার্যত দিশাহীন কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের কাছে সমস্যা হল ১৫ অগস্টের পর থেকে উপত্যকায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যেখানে-যেখানে নিরাপত্তা শিথিল করা হয়েছিল সেখানেই বিক্ষোভ হয়েছে। পাথর ছোড়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। হামলার শিকার হয়েছেন সরকারি কর্মীরাও। ফলে আপাতত কোনও ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষপাতী নয় নয়াদিল্লী।
সরকারের একটি শিবিরের মত হল সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আধাসেনা থাকুক কাশ্মীরে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন। তার আগে তুলে নেওয়া হোক বাড়তি নিরাপত্তা। তাহলে কাশ্মীর যে শান্ত, বিশ্বকে সেই বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। ওই মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গে পাকিস্তান সরব হলে একঘরে করা সম্ভব হবে ইসলামাবাদকে। পাল্টা মত হল, নিরাপত্তায় সামান্য ঢিলে দিলেই ঝামেলা হচ্ছে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে বরফ পড়া পর্যন্ত বাড়তি বাহিনী রাখা হোক। এতে অন্তত আগামী ছ’মাস কোনও বিক্ষোভ দানা বাঁধতে পারবে না। সময়ের সঙ্গেই কমে আসবে কাশ্মীরিদের ক্ষোভ। তখন পরিস্থিতি বুঝে ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হোক আধাসেনা। সবমিলিয়ে আধাসেনা মোতায়েন নিয়ে এখন ধন্দে সরকারই।