‘যাঁরা কাশ্মীরের সব সম্পদ লুট করেছেন তাঁদের খুন করা উচিত।’ এর আগে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করে বিতর্ক বাঁধিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। আবার এ কথাও বলেছেন যে, টেলিফোন না চলে ক্ষতি কী? মানুষ তো আর মরেনি! জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাহুল গান্ধীর পর এবার লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন সত্যপাল।
রাজ্যপাল এখন বিজেপির ভাষাতেই কথা বলছেন, তাই ওঁকে উপত্যকায় বিজেপির সভাপতি নিয়োগ করা হোক বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন অধীর। প্রত্যুত্তরে তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সত্যপাল মালিক। টেনে আনলেন লোকসভায় তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের প্রসঙ্গও। সত্যপালের দাবি, লোকসভায় দাঁড়িয়ে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে নিজে হাতে কংগ্রেসকে সমাধিস্থ করেছেন অধীর।
প্রসঙ্গত, শুরু থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ এবং বিভাজনের বিরোধিতা করে আসছে কংগ্রেস। সেই নিয়ে বাদানুবাদ চলাকালীন, চলতি মাসের শুরুতে লোকসভায় অধীর বলেন, ‘নিয়ম ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর ভাগ করা হচ্ছে। শিমলা চুক্তি ও লাহৌর চুক্তি সত্ত্বেও কী ভাবে এটা অভ্যন্তরীণ বিষয় হল? ওই দুই চুক্তিই দ্বিপাক্ষিক ছিল। ১৯৪৮ সাল থেকেই বিষয়টি রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরে রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এত বড় একটা পদক্ষেপের পিছনে কী প্রক্রিয়া ও কী নিয়ম মানা হয়েছে তা জানতে চায় কংগ্রেস।’
এই মন্তব্য টেনেই সোমবার তাঁকে কটাক্ষ করেন সত্যপাল। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সংসদে দাঁড়িয়ে উনি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে নিজে হাতেই দলকে সমাধিস্থ করেছেন। এর পর আর ওঁর জ্ঞান নিয়ে কী বলব? একনিষ্ঠ ভাবে নিজের কাজ করে যাচ্ছি। কে, কী বলল, তাতে যায় আসে না আমার।’
বিতর্কের সূত্রপাত গত শনিবার। জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে সত্যপালের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেই সেখানে হাজির হন রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী নেতাদের একটি দল। কিন্তু উপত্যকায় তাঁদের পা রাখতে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। শেষমেশ বিমানবন্দর থেকেই ফিরে আসতে হয় তাঁদের। এ নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েন সত্যপাল। ইচ্ছাকৃত ভাবে কাশ্মীরের মানুষকে বাইরের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রশ্ন ওঠে, এক দিকে উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দাবি করা হচ্ছে, অথচ গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে সেখানকার মানুষকে। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না কেন? প্রত্যুত্তরে সত্যপাল বলেন, ‘গুলাম নবি আজাদের সময়েও এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় প্রথম সপ্তাহেই প্রাণহানি ঘটেছিল। এ বার অন্তত তা হয়নি। যোগাযোগ পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকাতেই তা সম্ভব হয়েছে।’
তাঁর এই মন্তব্যেই চটেন অধীর। তিনি বলেন, ‘রাজ্যপালের মুখে এমন মন্তব্য শোভা পায় না। বিজেপি নেতাদের মতো কথা বলছেন উনি। তার চেয়ে বরং জম্মু-কাশ্মীরের সভাপতি নিয়োগ করা হোক ওঁকে।’ আর অধীরের এই মন্তব্যের পাল্টা দিতে গিয়েই তাঁকে কটাক্ষ করেন সত্যপাল। উপত্যকার রাজ্যপালের সাফ কথা, নিজে হাতেই তাঁর দল কংগ্রেসকে সমাধিস্থ করেছেন অধীর।