জন্মের পর কিশোরী বয়স থেকেই পিরিয়ড হতো না মেয়েটির। সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে হাজারো চিকিৎসা করিয়েও সুফল মেলেনি। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, নারীত্বের পরিচয়বাহক সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গই তার রয়েছে, শুধু নেই যৌনাঙ্গ। সেই সঙ্গে অপরিণত জরায়ু। শারীরিক ত্রুটি ছাপ ফেলে দাম্পত্য জীবনে। সমস্যার সমাধানে নানা হাসপাতালের দ্বারস্থ হন নবদম্পতি। অবশেষে উপায় মেলে একটিই হাসপাতালে। কৃত্রিম যোনি তৈরি করে যুবতীকে নতুন জীবন উপহার দেন ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা।
মগরাহাট থানা এলাকার বাসিন্দা ২৪ বছরের ওই যুবতীর বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর। তিনি জানিয়েছেন, এই দীর্ঘ সময়ে নানা হাসপাতালে হত্যে দিয়ে পড়ে ছিলেন, কিন্তু সুরাহা হয়নি। মাতৃত্বের স্বাদ তিনি কখনওই পাবেন না, এমন সম্ভাবনার কথাও বলেছিলেন চিকিৎসকরা। হার মানেননি যুবতী। তাঁর সাহস আর বিশ্বাসের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডঃ মানস সাহা জানিয়েছেন, ৮ এপ্রিল ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে গায়নেকোলজি বিভাগে ভর্তি হন ওই যুবতী। তাঁর সমস্যা দেখে তৈরি হয় মেডিক্যাল টিম। ওই বিভাগের প্রধান ডঃ সমাদৃতা চক্রবর্তী, ডঃ মানস সাহা এবং ডঃ নিতা রায়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় চিকিৎসা। ডঃ মানস সাহার কথায়, গত ২৪ বছরে একবারও ঋতুস্রাব হয়নি যুবতীর। তাঁর যৌনাঙ্গের (Vagina)গঠন অসম্পূর্ণ, জরায়ু ঠিকমতো তৈরিই হয়নি। ফলে সন্তানধারণ সম্ভব ছিল না তাঁর।
ডাক্তারি পরিভাষায় ভ্যাজাইনোপ্লাস্টি মানে হলো ভ্যাজাইনা বা যোনির প্লাস্টিক সার্জারি। একে ভ্যাজাইনাল ক্যানালের প্লাস্টিক সার্জারিও বলা হয়। অপরিণত যোনি বা ক্যানেলের গঠনের খামতি থাকলে সার্জারি করে সেই ঘাটতি মেটানো হয়। আর জন্ম থেকেই যাঁদের যোনি নেই, কখনও ঋতুস্রাব হয়নি, ইন্টারকোর্স কোনও ভাবেই সম্ভব নয়, ডাক্তারি পরিভাষায় তাকে বলে ‘ব্লাইন্ড ভ্যাজাইনা’।
নতুনভাবে কি করা হলো ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে? ডঃ মানসবাবু জানালেন, সাধারণত মুলেরিয়ান এজনেসিস-এর অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অন্যের দেহ থেকে টিস্যু বা ত্বকের কোষ নিয়ে গ্রাফটিং করে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। তবে সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের সফলতা অনেক সময়েই আসে না। তাই নতুন পদ্ধতিতে ল্যাপরোস্কোপিক ভ্যাজাইনোপ্লাস্টির সাহায্যে নতুন করে যুবতীর যৌনাঙ্গ ও জরায়ু তৈরি করা হয়। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মহিলা এখন তাঁর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে ফিরে গেছেন। আর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা জেলা।