শুক্রবার জন্মাষ্টমীর দিন কচুয়ায় এক বাড়ির পাঁচিল ভেঙে ঘটে গিয়েছিল এক বড়সড় দুর্ঘটনা। যাতে মৃত্যু হয়েছিল দুজনের। এই ঘটনার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, যে কোনও দুর্ঘটনা এড়াতে এর পর থেকে কচুয়ার মেলা সরকারের দ্বারা পরিচালিত হবে। বেশ কিছু পদক্ষেপও নিতে চলেছে তাঁর সরকার। এ জন্য খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কচুয়াধামের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি৷ আর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতোই এবার কচুয়ার নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন জ্যোতিপ্রিয়।
স্থানীয় পঞ্চায়েত, লোকনাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আর কখনও যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হবে। পুণ্যার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, ভিড় হলেও কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থতি যাতে তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে মন্দির কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে। তেমনি পঞ্চায়েত ও প্রশাসন এ ব্যাপারে সমস্ত ধরনের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।’ বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ছিলেন লোকনাথ মিশনের সচিব তুষার বসাক, বসিরহাটের আইসি প্রমাশিস চট্টরাজ প্রমুখ।
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বৈঠকে দুই পক্ষের আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। মন্দির কমিটির বিশেষ কোনও চাহিদা নেই। তবে রাস্তা চওড়া করার ব্যাপারে মন্দির কমিটির সঙ্গে আমরাও সহমত। মন্দির কমিটি এবং আমাদের একই চিন্তা-ভাবনা, দর্শনার্থীদের আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে রাস্তা একমুখী করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন যতদূর সাহায্য করার আমাদের করতে হবে। এ ব্যাপারে উভয় পক্ষের বক্তব্যই ইতিবাচক।’
তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, ‘সব থেকে আনন্দের কথা হল কচুয়া এবং চাকলা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার একটা কমিটি তৈরি হবে। ওই কমিটি বলেছে আমাদের আগামিদিনে আরও ভালভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। টানা ৩০ বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। কোনওদিন কোনও অঘটন ঘটেনি। এবারের এই ঘটনা একটা দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়। প্রবল বর্ষণে বহু ভক্ত এখানে-ওখানে আটকে গিয়েছিলেন। বৃষ্টি থামতেই সকলে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিলেন। কে আগে মন্দিরে পৌঁছবেন, তা নিয়ে তাড়া ছিল। তাতেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।’
এর পাশাপাশি জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘পুলিশ একটা মামলা রুজু করেছে। তবে সেটা অজানা নামে মামলা হয়েছে। পুলিস তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। সেক্ষেত্রে আমরা হস্তক্ষেপ করব না। আমরা চাই, আইন সব সময় আইনের পথে চলুক। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হবে না। আগামিদিনে এমন একটা পরিবেশ করে তৈরি করে দেব, সবাই আবাক হয়ে দেখবেন।’ এরপরই সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারাই আগামী বছর এসে বলবেন একবছরে এতটা করে ফেলেছেন! মুখ্যমন্ত্রী এটা নিজে দেখছেন। তিনি নিজেই তত্ত্বাবধান করবেন।’
মন্দির নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মন্দিরের রাস্তা চওড়া করা হবে। জেলাশাসক পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা মাপজোক করে দেখবেন। পুকুর ও পাশের জমির মালিকরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। মন্দিরের স্বার্থে তাঁরাও এগিয়ে আসবেন বলে কথা হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে লোকনাথ মিশনের সম্পাদক তুষার বসাক বলেন, ‘আমরা রাস্তা চওড়া করার ভাবনাচিন্তা করেছি। সেদিক থেকে এদিনের বৈঠক খুবই আশাপ্রদ হয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী আমাদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।’