বুধবার রাতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ২৬ আগস্ট অর্থাৎ আজ সোমবার শুনানি হবে। সেইমতোই এদিন বসেছিল এজলাস। তবে আজ, সোমবার দিনের শুরুতেই সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেলেন চিদম্বরম। এদিন হওয়ার কথা ছিল জামিনের ব্যাপারে তাঁর বিশেষ আবদনের শুনানি। কিন্তু সকালেই দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, তালিকাভুক্তই হয়নি চিদম্বরমের জামিনের মামলা। তাই সেই মামলার আজ শুনানি হওয়া সম্ভব নয়। তবে বাকি দুটি পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি হবে বলেই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
চিদম্বরমের তরফে এর আগে সুপ্রিম কোর্টে দুটি পিটিশন ফাইল করা হয়েছিল। একটি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ( ইডি )-এর হাতে গ্রেফতারি থেকে রক্ষা ও দ্বিতীয়টি সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতারির আগেই জামিনের আবেদন। বুধবার সন্ধ্যাবেলা থেকে টানটান নাটকের পর সিবিআই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারির পর জামিনের ব্যাপারে একটি বিশেষ আবেদন করেছিলেন চিদম্বরম। কিন্তু সোমবার আদালতের কাজ শুরু হওয়ার পরেই বিচারপতি জানিয়ে দেন যেহেতু চিদম্বরমের এই বিশেষ আবেদনের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ কোনও নির্দেশ দেননি, তাই এই মামলা তালিকায় তোলা হয়নি। ফলে আজ এই মামলার শুনানি হওয়া সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, আইএনএক্স মিডিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগে অসঙ্গতির মামলায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর জামিনের আর্জি খারিজ করেছিল দিল্লী হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন চিদম্বরমের আইনজীবীরা। আজ সোমবার কার্যত সেই মামলা শুনলই না শীর্ষ আদালত। বিচারপতি আর ভানুমতির বেঞ্চ জানাল, এখন আর আগাম জামিন নয়, সরাসরি জামিনের আবেদন জানাতে পারেন চিদম্বরম। কিন্তু তার শুনানি হবে সংশ্লিষ্ট আদালতে। অর্থাৎ সেটা বিশেষ সিবিআই আদালত হতে পারে, বা দিল্লী হাইকোর্ট হতে পারে— নির্দিষ্ট করেনি সুপ্রিম কোর্ট। অন্যদিকে, ইডির হাতে গ্রেফতারিতে রক্ষাকবচের আর্জির শুনানি চলছে আর ভানুমতির বেঞ্চেই।
সূত্রের খবর, ইডি হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, বিদেশে চিদম্বরমের প্রচুর সম্পত্তির হদিশ পেয়েছেন তাঁরা। সেই কারণেই তাঁকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তারা। তার বিরোধিতা করে চিদম্বরমের হয়ে সওয়াল করছেন কপিল সিব্বল। আবার হেফাজতের মেয়াদ শেষে আজ, সোমবার ফের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় চিদম্বরমকে আদালতে পেশ করছে সিবিআই। ২২ অগস্ট নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার পর থেকেই দফায় দফায় টানা জেরা চালিয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু চিদম্বরম তদন্তে অসহযোগিতা করে গিয়েছেন বলে সিবিআই-এর দাবি। এই যুক্তিতেই মনে করা হচ্ছে, এ দিন ফের তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চাইতে পারে কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা।
সিবিআই এবং ইডি সূত্রে খবর, আইএনএক্স মিডিয়ার প্রাক্তন যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা-ডিরেক্টর ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের বয়ানের ভিত্তিতেই গ্রেফতার হয়েছেন চিদম্বরম। আইএনএক্স মিডিয়া মামলাতেও তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছে সিবিআই। নিজের মেয়ে শিনা বরা হত্যা মামলায় জেলবন্দী ইন্দ্রাণীর সেই বয়ানকেই হাতিয়ার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অভিযোগ, চিদম্বরম যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় আইএনএক্স মিডিয়াকে বিদেশি বিনিয়োগে অনুমতি দিয়েছিল অর্থমন্ত্রকের অধীন ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন বোর্ড (এফআইপিবি)। কিন্তু সেই অনুমোদনেই অসঙ্গতি হয়েছিল বলে অভিযোগ।
ইন্দ্রানীর বয়ান অনুযায়ী, ২০০৭ সালে চিদম্বরম অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন এফআইপিবি-র কাছে বিদেশি লগ্নীর আবেদন করে আইএনএক্স মিডিয়া। তাতে বিদেশি লগ্নির টাকা সহযোগী সংস্থাগুলিতেও বিনিয়োগের অনুমতি চায় তারা। কয়েক মাস পর আইএনএক্স মিডিয়াকে ৪ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা বিদেশি লগ্নীতে অনুমোদন দিলেও, সহযোগী সংস্থায় ওই টাকা বিনিয়োগে সায় দেয়নি এফআইপিবি। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে, ২০০৭-এর অগস্ট থেকে ২০০৮-এর মে মাসের মধ্যে ৮০০ টাকা দরে শেয়ার বেচে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩০৫ কোটি টাকার বেশি আদায় করে আইএনএক্স মিডিয়া।
এই অনিয়ম নিয়ে ২০০৮ সালে আইএনএক্স মিডিয়াকে আয়কর দফতর নোটিস ধরালে কার্তি চিদম্বরমের আইনি ও আর্থিক পরামর্শদাতা সংস্থা অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিক কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেডের দ্বারস্থ হয় তারা। আর ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাঁদের বিদেশি লগ্নির টাকায় ছাড়পত্র পাইয়ে দেন কার্তি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ছেলের সংস্থার হয়ে আইএনএক্সকে ওই অন্যায় সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন চিদম্বরম।