পরাধীন ভারতে বহু বিস্মিত বাঙালি চরিত্র এসেছেন তাঁদের অসামান্য প্রতিভা ও কর্মদক্ষতা নিয়ে। তাঁরা এসেছেন আর ভারত তথা বিশ্বের আকাশে জ্বলজ্বল করেছে। তাঁরা দেশের পরাধীনতার আবহাওয়ায় স্বাস নিতে কষ্ট পেত। নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করে লড়াই চালিয়ে যেতেন। সেই মানুষগুলোর মধ্যে একটি নাম ইতিহাসের পাতায় টুকরো টুকরোভাবে স্থান পেয়েছে। সেই বিস্ময়কর প্রতিভার নাম হল ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত। নরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাই এই মহান মানুষটি। বিবেকানন্দের প্রতিভা যেভাবে বিকশিত হয়েছিল সেইভাবেই ভুপেন্দ্রনাথের প্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল।
স্বামীজীর মতো সমাজতাত্ত্বিক ছিলেন তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা। ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্ভবের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। যুবা বয়সেই তিনি ‘বেঙ্গল রেভলুশনারী সোসাইটি’র সদস্য হয়েছিলেন। বৈল্পলিক সমিতি গঠন করলে, তিনি এই সমিতিতে যোগদান করেন। এই সমিতির সূত্রে তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে অরবিন্দ ঘোষ, যতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগ্নী নিবেদিতা প্রমুখের সাথে। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে অরবিন্দ ঘোষের সহায়তায় তিনি বিপ্লবীদের মুখপত্র যুগান্তর প্রকাশ করা শুরু করেন। সেইসময় তিনি অরবিন্দ ও বারিন্দ্র ঘোষের সান্নিধ্য লাভ করেন।
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘সোনার বাঙলা’ নামের একটি বেনামী ইস্তাহার প্রকাশ করেন। পরে পুলিশের হাতে তিনি ধরা পড়েন এবং এই ইস্তাহার প্রকাশের জন্য তাঁর এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি ১৯০৮ সাল নাগাদ ভারত ত্যাগ করে আমেরিকা পাড়ি দেন। সেখানকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর স্নাতকোত্তর পড়াশুনা শেষ করেন। এই সময় তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গদর পার্টি এবং সোশ্যালিস্ট ক্লাবের সংস্পর্শে আসেন এবং সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানলাভ করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি জার্মানি চলে যান এবং সেখানকার বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯১৬ সালে তিনি বার্লিনে ভারতীয় স্বাধীন কমিটির সেক্রেটারি পদে আসীন হন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ‘জার্মান অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সোসাইটি’ এবং ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের আহ্বানে বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তিনি মস্কোতে আসেন। এই সময় তিনি সোভিয়েট নেতা লেনিনের কাছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রদান করেন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে মস্কো থেকে ভারতের শ্রমিক কৃষক আন্দোলনের একটি কর্মসূচী পাঠান। এইভাবে তিনি নিজের জ্ঞানের দ্বারা ভারতের বিপ্লবের ইতিহাসে তিনি উজ্জ্বল ছিলেন। ১৯৬১ সাল নাগাদ তিনি স্বাধীন ভারতে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। তাঁর লেখা বহু বই আজও স্বাধীন ভারতের নাগরিকদের গায়ে কাঁটা দিয়ে দেয়।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত