গোটা ডুরান্ড কাপ জুড়ে একটাই নাম ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ালো প্রত্যেকটি টিমের কাছে। মার্কাস জোসেফ… যার কবল থেকে ফাইনাল ম্যাচে রক্ষা পেল না শতাব্দী প্রাচীন মোহনবাগানও। সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময়ে সমতাসূচক গোল করে ম্যাচ বাঁচানোর পর ফাইনালে তাঁর জোড়া গোলেই মোহনবাগানকে হারাল গোকুলম এফসি। জোসেফকে আটকাতে এদিন হিমশিম খেলেন বাগান ডিফেন্ডাররা। বাগান ডিফেন্সকে একেবারে নাচিয়ে গোকুলমের হাতে ট্রফি দিলেন তিনি।
প্রথম ৪৪ মিনিটের খেলার পর যখন দর্শকরা ভাবছেন গোলশূণ্য ভাবেই বিরতিতে যাবে দু’দল, ঠিক সেইসময়েই ছন্দপতন। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে মার্কাস জোসেফের ঠিকানা লেখা বল আটকাতে গিয়ে প্রাক্তন বাগানি হেনরি কিসেকাকে ফাউল করে বসলেন বাগানের গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদার। পেনাল্টি থেকে ডুরান্ড কাপে নিজের ১০ নম্বর গোল করে গোকুলমকে বিরতির আগেই ১-০ গোলে এগিয়ে দেন সেই মার্কাস জোসেফ।
তার আগে পর্যন্ত প্রথমার্ধের বেশিরভাগ আক্রমণই হচ্ছিল বাগানের তরফ থেকে। দু’প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠছিলেন বাগান ফুটবলাররা। মাঝেমধ্যেই চাপ বাড়ছিল অ্যাটাকিং থার্ডে চাপ বাড়াচ্ছিলো কেরালার দলটি। গোকুলমের আক্রমণের দায়িত্ব ছিল মার্কাস-কিসেকা জুটির উপরেই। আর এই জুটিই মাঝেমধ্যে চাপ বাড়াচ্ছিল বাগান ডিফেন্সে। কিন্তু সে ভাবে গোলের মুখ খুলতে পারেনি দু’দলই। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে করা গোলে এগিয়ে যায় কেরলের দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে বাগান। আগের ম্যাচের হিরো সুহেরের বাঁ’পায়ের জোরালো শট দারুণ বাঁচান উবেইদ। কিন্তু ৫২ মিনিটের মাথায় ফের ধাক্কা দেন মার্কাস জোসেফ। অফসাইড ট্র্যাপ কাটিয়ে বল ধরে বক্সে ঢুকে দেবজিতের ডান দিক দিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল করে বাগানের জাল কাঁপিয়ে দেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ৬ মিনিটের মধ্যেই ২-০ ব্যবধান বাড়ান জোসেফ।
তারপরেই পরপর দুটি পরিবর্তন করেন মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা। আগের ম্যাচের ট্রাম্প কার্ড ফ্রান গঞ্জালেজকে নামান তিনি। সেইসময় একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে মোহনবাগান। খেলা ওপেন হয়ে যায়। ৬৩ মিনিটের মাথায় বেইতিয়ার ফ্রিকিক থেকে হেডে গোল করে ব্যবধান কমান বাগানের স্প্যানিশ স্ট্রাইকার সালভাদোর মার্টিনেজ পেরেজ।
তারপরেও আক্রমণ প্রতিআক্রমণের খেলা চলতে থাকে। বাগান অলআউট আক্রমণে ওঠায় মাঝে মধ্যেই সুযোগ পাচ্ছিলেন মার্কাস জোসেফ। অন্তত তিনবার জোসেফ ও ব্রুনো পেলিসারির নিশ্চিত গোল বাঁচান দেবজিৎ। অন্যদিকে সুযোগ পাচ্ছিলেন বাগান প্লেয়াররাও। কিন্তু কিছুতেই আর গোল আসছিল না। ৮৫ মিনিটের মাথায় হ্যাটট্রিকের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন জোসেফ। ৮৬ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন গোকুলমের জাস্টিন জর্জ।
বাকি সময়ে ১০ জনের গোকুলম ডিফেন্স ভাঙতে পারেনি বাগান। শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে প্রথম ডুরান্ড কাপ জিতে নিল কেরলের এই দল। অন্যদিকে অনেক আশা জুগিয়েও ম্যাচ হেরে গেল মোহনবাগান। যার ফলে যুবভারতী থেকে খালি হাতেই ফিরতে হলো মরসুমের প্রথম কাপ জয়ের আশায় থাকা সবুজ মেরুন সমর্থকদের।
(নিজস্ব চিত্র)