কচুয়াধাম এমনিতেই জনবহুল এলাকা। তার ওপর জন্মাষ্টমীর পুণ্য তিথিতে সেখানে ভিড় করেছিলেন প্রচুর মানুষ। প্রবল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাঁরা একে একে সমবেত হচ্ছিলেন মন্দির চত্বরে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে মন্দির সংলগ্ন একটি বাড়ির কার্নিসের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু ভোররাতে আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই বাড়ির পাঁচিল। যাতে মৃত্যু হয় দুজনের। এই দুর্ঘটনার জন্য লোকনাথ মিশনকেই দায়ী করেছে রাজ্য। অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের সঙ্গে অসহযোগিতারও। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে এর পর থেকে কচুয়ার মেলা সরকারি পরিকল্পনায় করা হবে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে তাঁর সরকার।
সকালেই দুর্ঘটনার খবর পেয়েই তদারকি শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। আহতদের দেখতে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা ও সামান্য আহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এরপর এসএসকেএম-এও আহতদের দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার কচুয়ায় বেশি ভিড় হয়েছিল। তার ওপর রাতে প্রচুর বৃষ্টিও হয়েছে। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতেই অনেকে রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকানগুলিতে আশ্রয় নেন। হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। পাশেই পুকুর ছিল। অনেকে পুকুরে পড়ে যান। পাঁচিল ভেঙে যায়। এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গঙ্গাসাগরে ২০-৩০ লক্ষ লোক যায়। তারাপীঠে রোজ কয়েক হাজার ভিড় হয়। সেখানে তাই রাস্তা চওড়া হচ্ছে। কচুয়াতেও এর পর থেকে পরিকল্পনা করতে হবে।’ অর্থাৎ কিনা, এর পর থেকে চাকলা এবং গঙ্গাসাগর মেলার কায়দাতেই কচুয়াতেও ভিড় সামলানোর পরিকল্পনা করা হবে। ভিড় সামলাতে কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কচুয়াধামের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল সভাপতি এবং রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। গোটা এলাকা ঘুরে দেখে, কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটল তা বোঝার চেষ্টা করেন।
সব দেখেশুনে মন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বেশ কয়েকটি নতুন নিয়ম চালু করার কথা বলেন। এবার থেকে কচুয়ায় এই আয়োজনের সমস্তটাই পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, চাকলার মতো কচুয়াতেও পরিকল্পনামাফিক সব করতে হবে, এ কথাও জানান। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, এবার থেকে যেখানে সেখানে দোকান করা যাবে না। এ নিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনায় বসা হবে। শুধু তাই নয়। আগামী বছর থেকে এ ধরনের উৎসবের মরশুমে মন্দিরে প্রবেশ এবং প্রস্থান পথ আলাদা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। কারণ, ঢোকা এবং বেরনোর পথ একই হওয়া দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মনে করেন তিনি। মন্ত্রী জানান, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই এর দায়িত্ব নিয়ে রাস্তা চওড়া করে পরবর্তী কালে সরকার কচুয়া মেলাটি পরিচালনা করবে।’