মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুর দিনই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে ‘আর্থিক সংস্কারের’ নামে নামে এবার এমনই এক তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার, যে ১০০ দিনের মধ্যেই তার কোপ পড়বে দেশের ৪২ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ওপর। তারপরই সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে প্রথম বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রেল এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণের পথেই হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। বাদ যাবে না প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিও। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই দেশের সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা তথা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির সব ইউনিটে ২০ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর অবধি টানা এক মাসব্যাপী কর্মচারী ধর্মঘট পালনের কথা ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এখনও চলছে কর্মীদের সেই ধর্মঘটে। স্তব্ধ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উৎপাদন।
প্রসঙ্গত, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলিকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিয়ে ধীরে ধীরে বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণের পথে এগোতে চাইছে মোদী সরকার, এই অভিযোগে মাসভর ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল প্রতিরক্ষা শিল্পের তিনটি প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন। সেই ধর্মঘটেরই তৃতীয় দিন ছিল বৃহস্পতিবার। ধর্মঘটকারীদের দাবি, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ৯৩ শতাংশ কর্মী যোগ দিয়েছেন প্রতিবাদে। এ রাজ্যে কাশীপুর, দমদম ও ইছাপুরের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতেও ধর্মঘট সর্বাত্মক বলে তাঁদের দাবি। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে জট কাটানোর জন্য দিল্লীতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনার এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলিকে নিয়ে। তার আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে পিআইবি মারফত জানানো হয়েছিল, প্রতিরক্ষা শিল্পে বেসরকারিকরণের কোনও পরিকল্পনা নেই।
কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আসলে বেসরকারিকরণের পথেই এগোবে কেন্দ্র। তাতে যেমন কর্মী ছাঁটাই হবে, তার চেয়েও বড় কথা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের গোপনীয়তা নষ্ট হবে। বিতর্ক মিটছে না দেখে কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনার প্রস্তাব দেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও শ্রমিক ফেডারেশনগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়া উচিত। কিন্তু কর্পোরেটের পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের লিখিত আশ্বাস না পেলে তারা অন্য কোনও প্রস্তাব মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তিনটি প্রধান শ্রমিক ফেডারেশন এআইডিইএফ, আইএনডিডব্লিউএফ এবং বিপিএমএস। বাংলার শাসক দল তৃণমূল এবং কংগ্রেসও সমর্থন জানিয়েছে ধর্মঘটকে। গান্ধীমূর্তির নীচে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের লাগাতার অবস্থান-মঞ্চ থেকে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলিকে কর্পোরেটের হাতে দেওয়ার বিরোধিতা করা হয়েছে।