মিলল না মুক্তি। সারাদিন ধরে নানা টানাপোড়েনের পর অবশেষে রায় দিল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। আইএনএক্স দুর্নীতি মামলায় পি চিদম্বরমকে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল সিবিআই আদালত। আগামী ২৬ আগস্ট পর্যন্ত সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকবেন চিদম্বরম। এদিন চিদম্বরমকে আদালতে তোলার পর সিবিআই তরফের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সওয়াল শুরু করেন। চিদম্বরমকে হেফাজতে নেওয়ার গুরুত্ব বোঝান তুষার মেহতা। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, তদন্তে সাহায্য করছেন না প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “তিনি চুপ থাকতেই পারেন। ওটা ওঁর সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু প্রশ্ন করলে ঘুরিয়ে উত্তর দিচ্ছেন।”
এদিন তুষার মেহতা আরও বলেন, চিদাম্বরমকে হেফাজতে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। চার্জশিট কার্যত প্রস্তুত। তাঁর সঙ্গে অন্যান্য অভিযুক্তদের মুখোমুখি বসিয়ে তদন্ত করতে চান সিবিআই ও ইডির আধিকারিকরা। এর পরই ৫ দিনের হেফাজতের আর্জি জানান তুষার মেহতা। চিদম্বরমকে হেফাজতে নিলে তদন্তে কতটা সুবিধা হতে পারে এ নিয়ে বলতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় উল্লেখ করেন তুষার মেহতা। হেফাজতে নিলে তদন্ত আরও সহজ হয় বলে ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল। এরপর বিচারকের কাছে তদন্তের সমস্ত নথি পেশ করেন তিনি।
সলিসিটর জেনারেলের সওয়ালে চিদম্বরমের আইনজীবী কপিল সিব্বল জবাব দেন, এই মামলায় অভিযুক্ত সবাই এখন জামিনে রয়েছে। মূল অভিযুক্ত কার্তি চিদাম্বরম, আইএনএক্সের কর্ণধার পিটার ও ইন্দ্রাণী মুখার্জিও জামিনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিদম্বরমের অন্যতম আইনজীবী কপিল সিব্বল। চিদম্বরমের ক্ষেত্রে গ্রেফতারের কী প্রয়োজন সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। কপিল আরও জানান, আইএনএক্স মিডিয়াকে বিদেশি বিনিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র চিদম্বরমের একার ছিল না। ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি ওই বোর্ডের প্রধান হলেও আরও ৬ সচিবের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি বলে এদিন জানান কপিল সিব্বল।
সিব্বল আরও বলেন, চিদম্বরমকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করা হলেও বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ নাগাদ প্রশ্ন করা হয়। তাঁকে ১২টি প্রশ্ন করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৬টি প্রশ্ন এর আগে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করা হয়। এরপর চিদম্বরমের দ্বিতীয় আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ওঠেন সওয়াল করতে। তাঁর প্রশ্ন, এই মামলায় অভিযুক্ত ইন্দ্রাণী মুখার্জির বয়ানের ভিত্তিতে কীভাবে তাঁর মক্কেলকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে চিদম্বরম চুপ থেকেছেন বলে তুষার মেহতা যে অভিযোগ করেন, সেই প্রসঙ্গে মনু সিঙ্ঘভি বলেন, তদন্তকারীদের পছন্দ মতো উত্তর না দিতে পারা মানে তো চুপ করা নয়। তাঁকে যদি ১০ বার সমন করেও না আসেন তাহলে চিদম্বরম অসহযোগিতা করছেন বলা যেতে পারে।
আইনজীবী মনু সিঙ্ঘভি বলেন, চিদম্বরমের জামিন নাকচ হতে পারে ৩টি কারণে। অসহযোগিতা, প্রমাণ লোপাট এবং ফেরার হওয়া। কিন্তু চিদম্বরমের ক্ষেত্রে এই ৩ টি কারণের কোনওটাই সাজে না। এমনটাই যুক্তি দেন সিঙ্ঘভি। এরপর পি চিদম্বরম নিজেই সওয়াল করেন। তিনি বলেন, তদন্তকারীরা যা জানতে চেয়েছেন, সব উত্তর দিয়েছি। চিদাম্বরমের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় তাঁর বিদেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা! তাঁর ছেলে কার্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে কিনা! এই দুটো প্রশ্নের উত্তরে না বলেছেন বলে জানান প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। তবে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর জবাবে সন্তুষ্ট হননি বিচারক। আর তাই শেষপর্যন্ত চিদম্বরমকে ৫ দিন সিবিআই হেফাজতে থাকার রায় দেন তিনি।