গ্রেফতারির আশঙ্কা ছিলই। অবশেষে দিনভর নাটকের পর সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বুধবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে। আর এরপরই রাজনীতির অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি প্রশ্ন, শিনা বরা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া বয়ানেই কি এ হেন বিপদের সম্মুখীন হতে হল চিদম্বরমকে?
প্রসঙ্গত, শিনা বরা হত্যাকাণ্ডে একসময় সাড়া পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। আর সেইসময়ই দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। গত কয়েক বছরে তাঁকে নিয়ে সেভাবে আলোচনা না হলেও আইএনএক্স মিডিয়া দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের জামিনের আর্জি খারিজ হওয়ার পর থেকেই ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইন্দ্রাণী। তাঁর বয়ান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই চিদম্বরমের বিরুদ্ধে এগনো গিয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।
মেয়ে শিনা বরাকে হত্যার অভিযোগে ২০১৫-র অগস্ট থেকে জেলবন্দী ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। ষড়যন্ত্রে সামিল থাকার অভিযোগে জেলে রয়েছেন তাঁর স্বামীও। তাঁরাই আইএনএক্স মিডিয়ার যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা। অর্থমন্ত্রকের অধীনস্থ ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন বোর্ডের (এফআইপিবি)-র অনুমোদন না নিয়েই, সংস্থার জন্য কোটি কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আনার অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে।
২০১০ সালে ইউপিএ সরকারের আমলেই প্রথম আইএনএক্স দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। আর তখন বিপদ এড়াতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তির সাহায্য নিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী ও পিটার। ছেলের কথা ভেবে চিদম্বরম তাঁদের অন্যায় সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এমনকী চিদম্বরমই আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার ‘প্রধান ষড়যন্ত্রী’ হতে পারেন বলে জানিয়েছে দিল্লী হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সরকার বদলের পর নতুন করে গতি পায় তদন্ত। জানা যায়, ২০০৭ সালে চিদম্বরম অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন এফআইপিবি-র কাছে বিদেশি লগ্নীর আবেদন করে আইএনএক্স মিডিয়া। তাতে বিদেশি লগ্নির টাকা সহযোগী সংস্থাগুলিতেও বিনিয়োগের অনুমতি চায় তারা। কয়েক মাস পর আইএনএক্স মিডিয়াকে ৪ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা বিদেশি লগ্নীতে অনুমোদন দিলেও, সহযোগী সংস্থায় ওই টাকা বিনিয়োগে সায় দেয়নি এফআইপিবি।
তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে, ২০০৭-এর অগস্ট থেকে ২০০৮-এর মে মাসের মধ্যে ৮০০ টাকা দরে শেয়ার বেচে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩০৫ কোটি টাকার বেশি আদায় করে আইএনএক্স মিডিয়া। এই অনিয়ম নিয়ে ২০০৮ সালে আইএনএক্স মিডিয়াকে আয়কর দফতর নোটিস ধরালে কার্তি চিদম্বরমের আইনি ও আর্থিক পরামর্শদাতা সংস্থা অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিক কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেডের দ্বারস্থ হয় তারা। আর ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাঁদের বিদেশি লগ্নির টাকায় ছাড়পত্র পাইয়ে দেন কার্তি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ছেলের সংস্থার হয়ে আইএনএক্সকে ওই অন্যায় সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন চিদম্বরম। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলাকালীন গত বছর মার্চে মুম্বইয়ের বাইকুল্লা জেলে ইন্দ্রাণী-কার্তিকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে সিবিআই। আর সেখানেই কার্তিকে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়ার কথা মেনে নেন ইন্দ্রাণী। ওই মামলায় রাজসাক্ষী হতেও রাজি হন তিনি। চিদম্বরম-কার্তি অবশ্য শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতেই বিজেপি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
গতকালও চিদম্বরম পরিষ্কার বলেছেন, ‘আমি আইএনএক্স মামলায় অভিযুক্ত নই। অভিযুক্ত নন আমার পরিবারের কোনও সদস্য। এ নিয়ে আদালতে আমাদের কারও বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট জমা দেয়নি সিবিআই এবং ইডি। তাই আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে যতদূর হয় যাবো।’