মাত্র কয়েকদিন আগেও মোহনবাগান সমর্থকরা সালভা চামোরোকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। স্পেনীয় স্ট্রাইকারের কানে তা কেউ পৌঁছে দিয়েছিলেন কি না জানা নেই। তবে ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে চামোরোর কামান দাগা শট বাগান সমর্থকদের বুকে এনে দেয় স্বস্তি। ওরকম গোল দেখার জন্যই তো সমর্থকরা মাঠে আসেন। চামোরো ও সুহেরের (২) গোলে রিয়েল কাশ্মীরকে ১-৩ হারিয়ে মোহনবাগান চলে গেল ডুরান্ড কাপের ফাইনালে।
তবে জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক অবশ্যই ভিপি সুহের। ৬৯ মিনিটে রোমারিওর পরিবর্তে তাঁকে নামানোটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। গতবার কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে হ্যাটট্রিক ছিল সুহেরের। তারপরেও তাঁকে বাতিল করা হয়। চলে গিয়েছিলেন নিজের রাজ্যের টিম গোকুলমে। এ বার কলকাতায় ফিরেই নায়ক। মুখে না বললেও, বুধবার রাতে সবুজ-মেরুন জার্সিতে সুহের যেন অলিখিত জবাব দিয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গলকেও। লাল-হলুদের দুই জোড়া বাতিল ফুটবলারই ডুরান্ড সেমিফাইনালের নায়ক!
আগামী শনিবার যুবভারতীতেই মোহন বাগান চ্যালেঞ্জ সামলাবে গোকুলাম এফসি’র। বলাই বাহুল্য, বাংলার সম্মান এখন পালতোলা নৌকার কাছেই। গোকুলাম এফসি’র কাছে হেরে এমনিতেই মন খারাপের মেঘ দানা বেঁধেছিল ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের হৃদয়ে। বাড়ি ফেরার পথে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো তাঁদের দিকে ধেয়ে এসেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহন বাগান অনুরাগীদের টিপ্পনি। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের এক নম্বর গেটের সামনে অপেক্ষারত সবুজ-মেরুন জনতার চিৎকারে বেশ অস্বস্তিতেই পড়তে দেখা গেল ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের। আসলে ঐতিহ্যমণ্ডিত ডুরান্ড কাপের সেমি-ফাইনালে লাল-হলুদের বিদায় নিজেদের ম্যাচের আগে বাড়তি উদ্দীপনা জুগিয়েছে মোহন বাগানকেও।
রিয়াল কাশ্মীরের বিরুদ্ধে ৪-৪-২ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন মোহন বাগান কোচ কিবু ভিকুনা। তিন ডিফেন্ডারে দলকে খেলাতে তিনি পছন্দ করেন। কিন্তু কর্তাদের পরামর্শেই নিজের পছন্দের ছক বদলাতে বাধ্য হন স্প্যানিশ কোচ। পক্ষান্তরে রিয়াল কাশ্মীর প্রথম একাদশে রেখেছিল কোচের ছেলে ম্যাসন রবার্টসনকে। কিন্তু তাঁর নাম ডুরান্ড কাপের জন্য নথিভুক্ত করেনি তারা। তাই মোহন বাগানের আপত্তিতে ম্যাসনকে বাদ দিতে হয়।
কলকাতা লিগে সবুজ-মেরুনের পারফরম্যান্স দেখে সমর্থকরা ভেঙে পড়েছিলেন। ডুরান্ডের সেমিফাইনালে রং ছড়াল মোহনবাগান। যুবভারতীর মাঠে খুলে গেল বেইতিয়া-মোরান্তেদের পাসিং ফুটবল। ঠিক যখন মনে হচ্ছে মোহনবাগান ফাইনালে পৌঁছে গেল ঠিক তখনই কহানি মে টুইস্ট। খেলার একেবারে শেষ লগ্নে কাশ্মীরের হয়ে হেডে সমতা ফেরান ক্রিজো। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ইস্টবেঙ্গল-গোকুলম ম্যাচও গড়িয়েছিল এক্সট্রা টাইমে। তার পর টাইব্রেকারে খেলার ফলাফল হয়। মোহনবাগান অবশ্য সেই পথে যায়নি। ফ্রান গঞ্জালেজের পাস থেকে বল পেয়ে গোল করেন সুহের। এক্সট্রা টাইমের দ্বিতীয়ার্ধে ফের গোল করে ব্যবধান বাড়ান সুহের। ম্যাচে আর ফিরতে পারেনি রিয়েল কাশ্মীর।
গতকাল পাসিং ফুটবল খেলেই রিয়াল কাশ্মীরের রক্ষণে চিড় ধরানো ছিল মোহন বাগানের লক্ষ্য। মিডফিল্ড জেনারেল হোসেবা বেইতিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল মাঠে উপস্থিত হাজার পাঁচেক সমর্থককে আনন্দ দিয়েছে। পাসিং সেন্স, ছোট জায়গার মধ্যে বুদ্ধিদীপ্ত টার্নিং, চমৎকার বল কন্ট্রোল এই স্প্যানিশ মিডিওটির সম্পদ। আদর্শ ফুটবলার আন্দ্রে ইনিয়েস্তার মতো তিনিও পছন্দ করেন খেলা তৈরি করতে। কিন্তু সুরাবুদ্দিন-শেখ সাহিলদের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।