রেলের একটি কমিটির সদস্য পদ পাইয়ে দেওয়ার নামে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০১৬ সালের মে মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে বিশাল অঙ্কের টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে। প্রথমে সেই টাকার পরিমাণ ৪০ লক্ষ বলে জানা গেলেও, তদন্তে উঠে আসছে মোট ৭০ লক্ষ টাকা টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এ কাজে মুকুলের সহযোগী হওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার প্রভাবশালী বিজেপি নেতা বাবান ঘোষ। আর বাবান গ্রেফতার হতেই জল্পনা উসকে বুধবার হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন মুকুল।
প্রসঙ্গত, সরশুনা থানা এলাকার বাসিন্দা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক যুবক গত জানুয়ারি মাসে মুকুল-সহ চার জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত দেড়টায় ঘুম থেকে তুলে আনা হয় বেহালার শকুন্তলা পার্কের বাসিন্দা বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের নেতা বাবান ঘোষকে। দীর্ঘ জেরার পর সকাল সাড়ে ৯ টায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সরশুনা থানার পুলিশ প্রতারণা, এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মতো একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁর মোবাইল ফোন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মামলার এফআইআরে মূল অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে মুকুলের। বাবান ছাড়া বাকি দুই অভিযুক্তের নাম রাহুল সাউ এবং সাদ্দাম আনসারি।
অভিযোগকারী সন্তু তাদের জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে নিজাম প্যালেসে বাবান ঘোষের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। পরবর্তী কালে তাঁকে রেলের স্থায়ী একটি কমিটিতে স্থায়ী সদস্যপদ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বাবান। মৌখিক চুক্তি মতো ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কয়েক দফায় তিনি প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা নেন। তদন্তে জানা গেছে, ২০১৫ সালে সুরেশ প্রভু রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সন্তুকে দিল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করানো হয় সন্তুর। রেলমন্ত্রীর সই করা কিছু নথিও তাঁকে দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, বাবানের সঙ্গে মধ্য কলকাতার একটি জায়গায় নগদ টাকার লেনদেন হয়। কিছু টাকার লেনদেন হয় অনলাইনেও। অন্যদিকে, অভিযোগকারী সন্তুর দাবি, দিল্লীতে মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর আলাপ করান বাবানই। উল্লেখ্য, ভারতীয় জনতা মজদুর ট্রেড ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি এই বাবান ঘোষ। এর পাশাপাশি তিনি টলিউডে চালু হওয়া বিজেপি সংগঠনের সভাপতিও। তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের দাবি। গতকাল বাবানকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে ২৮ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।