গত ৫ আগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয় কাশ্মীরে। বিশেষ মর্যাদা হারায় কাশ্মীর। আর তার পর থেকেই টানা বেশ কয়েক দিন দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল কাশ্মীর উপত্যকা। তারপর এখন কেমন আছে ৩৭০ মুক্ত কাশ্মীর, এমনকি কেমন আছেন সেখানের মেয়েরা! ৩৭০ মুক্ত হবার পর বন্ধ যোগাযোগ ব্যাবস্থা। বন্ধ ছিল ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবাও। বাইরের দুনিয়ার থেকে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে যেন অবস্থান করছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাও তাদের নিজস্ব ধর্মীয় পরবে ছেলেরা বাইরে বেরিয়ে ইদের নামাজ পড়তে পারলেও বেরোতে পারেননি কাশ্মীরের মেয়েরা। মেয়েদের বন্দীদশা আরোও করুন, তাদের বাইরে বেরোবার কোনো রকম উপায় নেই। তারা কেবল জানলা দিয়ে দেখে বাইরে আধাসেনার টহল। আর আতঙ্কে কাটায় দিন।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ হলে সমাজে লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে মহিলাদের অধিকারও সুরক্ষিত হবে, এমন দাবি করেছিল বিজেপি। তবে তার এক দিন পর থেকেই কাশ্মীরি মহিলাদের দিকে ছুটে এসেছে কুরুচিকর ইঙ্গিত, তা-ও আবার খোদ বিজেপি মন্ত্রীদের বক্তৃতাতেই। শ্রীনগরের মেকআপ শিল্পী ২২ বছরের সামরিন বললেন, “যে ভাবে কাশ্মীরি মহিলাদের পণ্যের মতো দেখা হচ্ছে ভারতে এবং তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশের ছবি ব্যবহার করে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে এবং সম্মানহানিকর ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তাতে প্রতি মুহূর্তে নিজেদের নির্যাতিত মনে হচ্ছে। আর সেই অনুভূতি কাশ্মীরের পুরুষদের আতঙ্কের চেয়েও বেশি ভয়াবহ”। শ্রীনগরের বাসিন্দা ২২ বছরের মিসবা রিহাসিও মনে করেন, বিজেপি যে ভাবে মুসলিম মহিলাদের রক্ষা করতে ‘মসিহা’ সাজার চেষ্টা করছে, তা আদতে সত্যি নয়। তাঁর কথায়, “আশা করি, ভারতের মানুষ এক দিন বুঝতে পারবে, এই দলের কাশ্মীরি মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনও ইচ্ছা বা প্রচেষ্টাই নেই”।
পড়াশোনার জন্য কেরালায় থাকতে হয় বছর কুড়ির তরুণী উজমা জাভেদকে। পরিবারের সঙ্গে ইদ পালনের জন্য ওই সময়ে কাশ্মীরে ফিরেছিলেন উজমা। কিন্তু ইদ তো দূরের, ঘরে ফিরে বন্দিদশাতেই ইদ কেটে গেল উজমার। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে উজমা জানিয়েছেন, “ওই সময়টা সব চেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে কাশ্মীরি মেয়েদেরই। সে সময় প্রতিটা মুহূর্ত উৎকণ্ঠায় কেটেছে। শ্রীনগরে দোতলা বাড়ির জানলা থেকে বারবার চোখ চলে যেত রাস্তায়। এই বুঝি কিছু হল। সুনসান রাস্তাঘাট। টহল দিচ্ছে আধাসেনা। কেউ কেউ হয়তো আধাসেনাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাস্তা জুড়ে ছড়ানো কাঁটাতারের গণ্ডি পার করে বেরোতে পেরেছিল। কিন্তু ভয়ে আতঙ্কে কাঁটা হয়েছিলেন আমার পরিজনেরা”। তিনি আরও বলেছেন, “বাবা বা ভাইকেও আমি বাড়ির বাইরে বেরোতে দিতে চাইছিলাম না সে সময়। কিন্তু কোনও উপায়ও ছিল না। বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এবং রুটিটুকু আনার দরকারে বেরোতেই হচ্ছিল”।