দিদিকে বলতেই হল না। তাঁকে বলার আগে খোদ দিদিই এসে হাজির দুয়ারে। তিনি নিজে থেকেই শুনে নিলেন সকলের অভাব-অভিযোগের কথা। না দিবাস্বপ্ন নয়। প্রকৃতপক্ষে এমনটাই ঘটল সোমবার। গতকাল ‘দিদিকে বলো’র ফলিত রূপই দেখল রাজ্যবাসী। ও’দিন হাওড়ার বস্তিতে এবং দীঘার কাছে একটি তফসিলি গ্রামে গিয়ে নজির গড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
সোমবার দুপুরে প্রথমে হাওড়ায় প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেখানে পৌঁছনোর আগেই ফোরশোর রোডের পাশে দু’নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের হরিজন বস্তিতে আচমকাই দাঁড়িয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। আড়াই ফুট চওড়া বস্তির গলিতে সটান ঢুকে যান মমতা। ঘরে ঢুকে ঢুকে কথা বলতে শুরু করেন সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে। জেনে নেন তাঁদের অভাব-অভিযোগ। এবং সেখানেই তিনি জানতে পারেন, ওই বস্তির কারও কাছে রেশন কার্ড নেই।
শুধু তাই নয়, বস্তির নিকাশি ব্যবস্থা, আবর্জনার স্তূপ, শৌচাগারের অবস্থা দেখে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান কাউন্সিলর কেন কোনও ব্যবস্থা করেননি। প্রশাসনিক সভায় গিয়ে হাওড়ার পুর কমিশনার তথা প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন বিজিন কৃষ্ণের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘আপনার এখানে পানীয় জলের সমস্যা হচ্ছে কেন?’ এরপরেই নির্দেশ দেন, ‘কাউন্সিলর নেই তো কী হয়েছে? আপনি বস্তিতে ঘুরবেন। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন।’
হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বিকেলেই পূর্ব মেদিনীপুরে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও দীঘা সংলগ্ন তফসিলি জাতি অধ্যুষিত মৈত্রাপুরে পৌঁছে যায় তাঁর কনভয়। তারপর জেলার দুই বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং অখিল গিরি ও সাংসদ শিশির অধিকারীকে নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মমতা। জেনে নেন, তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা। যে কোনও অসুবিধায় তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন।
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে গ্রামে গিয়ে খাটিয়ায় বসে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনুন।’ নেতাদের যে নির্দেশ তিনি দিয়েছেন, এবার হাওড়া এবং মেদিনীপুরে নিজেই সে কাজ করে দেখিয়ে নজির গড়লেন মুখ্যমন্ত্রী।