বিগত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে দেশের গাড়ি শিল্প। বলা হচ্ছে, এমনভাবে গাড়ি শিল্পে ধস কোনোদিন নামেনি। গত সপ্তাহে গোটা দেশে গাড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় তিনলাখ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। আর এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতিবিদদের চিন্তা বাড়িয়েছে দেশে ব্যক্তিগত যাত্রীবাহী গাড়ি বা পিভি শিল্পের নিম্নমুখী বাজার। সপ্তাহ খানেক আগে ঝাড়খণ্ডে একটি গাড়ি যন্ত্রাংশ সংস্থার কর্মী কাজ হারিয়ে আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এবার ফের সেই রাজ্যেই আর এক যন্ত্রাংশ সংস্থার কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যিনি আবার স্থানীয় বিজেপি নেতার ছেলে। তাঁর পরিবারের একাংশের দাবি, চাকরি নিয়ে সংশয় থেকেই আশিস কুমার নামে বছর ছাব্বিশের ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন।
আশিসের মৃত্যুর জন্য গাড়ি শিল্পের মন্দা দশাকেই ইঙ্গিত করেছেন তাঁর বাবা কুমার বিশ্বজিৎ। তাঁদের বাড়ি জামশেদপুরের বারিডিহ এলাকায়। কুমার সেই ব্লকেরই বিজেপি নেতা। বছর খানেক আগে আশিসের বিয়ে হয়। কুমার পুলিশকে জানিয়েছেন, সংস্থাটিতে তাঁর ছেলে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। গত শুক্রবার সকালে তিনি অফিস যান। বিকেলে তাঁকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মেলে। গত কয়েক মাস অফিস নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিল আশিস। যদিও কুমারকে এ দিন ফোন করলেও তিনি এ নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
দেশ জুড়ে গাড়ি বিক্রি তলানিতে। ইতিমধ্যে সার্বিক ভাবে এই শিল্পে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কর্মী কাজ হারিয়েছেন। যন্ত্রাংশ শিল্পের আশঙ্কা, এই অবস্থা চললে শুধু সেই ধরনের সংস্থাগুলিতেই প্রায় ১০ লক্ষ কর্মী ছাঁটাই হবেন। সিংভূম ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা জামশেদপুরের আদিত্যপুর গোমহারিয়া শিল্পাঞ্চলে এক যন্ত্রাংশ সংস্থার কর্তা বিকাশ মুখোপাধ্যায় সোমবার বলেন, ‘‘গাড়ির চাহিদা কমায় যন্ত্রাংশের চাহিদাও খুব কমে গিয়েছে। বহু কারখানা মাসে হয়তো ১৫-২০ দিন খোলা থাকছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। আরও অনেকেই সেই আশঙ্কায় রয়েছেন।’’
গত ৯ মাসে ব্যক্তিগত যাত্রীবাহী গাড়ি বা পিভি বিক্রি ৩০.৯৮ শতাংশ কমে হয়েছে ২০০৭৯০ ইউনিট। যেখানে ২০১৮–য় জুলাই পর্যন্ত গাড়ি বিক্রি হয়েছিল ২৯০৯৩১ ইউনিট। গোটা জুলাই মাসে মাত্র ২ লক্ষ ৭৯০ টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ি উৎপাদন কমিয়েছে প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। বিভিন্ন সংস্থা মিলিয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ উৎপাদন কমে গিয়েছে। দেশের দুই প্রথম সারির গাড়ি নির্মাতা সংস্থা টাটা মোটরস ও মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা শুক্রবার জানিয়েছে, বাজারে চাহিদা যে হারে কমেছে, তাতে তারা কয়েকটি কারখানায় উৎপাদন কমিয়ে দেবে। গাড়ি শিল্পের কর্তারা জানিয়েছেন, অর্থনীতির এই ক্ষেত্রে এতবড় মন্দা খুব কমই এসেছে।
সিয়ামের ডিজি বিষ্ণু মাথুর বলেছেন, “গত ১৯ বছরে এটাই সব থেকে বড় ঘাটতি গাড়ি শিল্পে। ২০০০ সালে শেষবার গাড়ি শিল্পে মন্দ দেখা দিয়েছিল। তবে এতটাও পতন সেইবছর হয়নি। সাম্প্রতিক কালে ৩০০টি গাড়ির ডিলারশিপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আড়াই লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। গাড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ১০ লক্ষ মানুষের চাকরি সঙ্কটাপন্ন।” তিনি আরও বলেন যে, “দেশের গাড়ি শিল্পে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সাহায্য প্রয়োজন। যাতে এই শিল্প পুনর্জীবিত হতে পারে।