কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের পরই বসে গিয়েছিল গাড়ি ব্যবসার চাকা। আর গাড়ি বিক্রিতে ধস নামার ফলে বিপাকে যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিও। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, আগামী দিনে ১০ লক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা করছে তারা। ফলে গাড়ি বিক্রি যে ক্রমাগত কমছে এবং সংস্থাগুলি যে বড় সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে, তা আগেই স্পষ্ট। কিন্তু মঙ্গলবার গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম জুলাইয়ের যে বিক্রির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তা ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে অর্থনীতির শিরদাঁড়ায়।
জানা গেছে, জুলাইয়ে গত ১৯ বছরের সব থেকে কম বিক্রি দেখেছে ভারতের গাড়ি শিল্প ক্ষেত্র। গত মাসে ঘরোয়া বাজারে যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি তার আগের বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ১৮.৭১ শতাংশ কমে গিয়েছে। গাড়ি শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি এই মন্দার ফলে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী কাজ হারিয়েছে বলেও তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে সিয়াম। আর তাদের প্রকাশিত সাম্প্রতিক রিপোর্টে সিয়ামের তথ্যকেই মান্যতা দিয়েছে গাড়ি সংস্থাগুলির ডিলারদের সংগঠন ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনও (ফাডা)।
সিয়ামের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাইয়ে যাত্রীবাহী ও দু’চাকার গাড়ি সমেত সমস্ত ধরনের ১৮,২৫,১৪৮টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে এই সংখ্যাটাই ২২,৪৫,২২৩ ছিল। এর আগে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে ঘরোয়া বাজারে গাড়ির বিক্রি ২১.৮১ শতাংশ কমে গিয়েছিল। চলতি বছরের জুলাইয়ে সার্বিক গাড়ি বিক্রি কমলেও সব থেকে বেশি মার খেয়েছে যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি। গত মাসে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রিও ১৯ বছরের সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছেছে। জুলাইয়ে যাত্রীবাহী শোরুমগুলিতে গাড়ির বিক্রি ৩০.৯৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
তার আগে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি সব থেকে খারাপ হয়েছিল। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় বিপণিগুলিতে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি ৩৫.২২ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সার্বিক ভাবেও ওই বছর ডিসেম্বরে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি ৩৯.৮৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল। গত মাসে যাত্রীবাহী গাড়ির সার্বিক বিক্রি ৩৫.৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। জুলাই নিয়ে টানা ন’মাস ঘরোয়া বাজারে যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি কমল। যাত্রীবাহী গাড়ি ছাড়াও গত মাসে দু’চাকার বিক্রিও ২০১৮-র জুলাইয়ের তুলনায় ১৬.৮২ শতাংশ কমেছে।
গাড়ি শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সিয়ামের ডিরেক্টর জেনারেল বিষ্ণু মাথুর বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের দ্রুত পদক্ষেপ করা দরকার। পরিস্থিতি বদলের জন্য কেন্দ্রকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিক্রি বাড়ানোর জন্য যা যা করণীয় গাড়ি সংস্থাগুলি তাই করছে। কিন্তু, এখন গাড়ি শিল্পক্ষেত্রকে চাঙ্গা করার জন্য কেন্দ্রের পুনরুজ্জীবন প্যাকেজের প্রয়োজন।’ তিনি জানান, গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণ সংস্থাগুলির ১০ লক্ষের বেশি কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বিক্রি কমতে থাকায় প্রায় ৩০০ ডিলার সংস্থা তাদের বিপণি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে প্রায় ২ লক্ষ কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন।
তাই এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র যদি সাময়িক ভাবেও গাড়ির ওপর জিএসটি কমায় তা হলেও কিছুটা লাভ হয়। যদিও গাড়ি সংস্থাগুলি পাকাপাকি ভাবেই জিএসটি কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছে। দেশের উৎপাদন ক্ষেত্রে জাতীয় উৎপাদন হারের প্রায় অর্ধেক গাড়ি শিল্প থেকে আসে। কাজেই এই শিল্পক্ষেত্রে মন্দা দেখা দিলে তার প্রভাব দেশের সার্বিক জাতীয় উৎপাদনের ওপর পড়বে বলেই মনে করেন মাথুর।