ঘড়ির কাঁটা বলছে সময় রাত ১০টা। দার্জিলিং লাগোয়া সোনাদার নয়াগাঁও এলাকায় খাওয়াদাওয়া সেরে মেয়ে স্মৃতিকে নিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন ৫৮ বছরের অরুণা লামা। হঠাৎ মুরগির ঘর থেকে ডাক আর ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ আসতে থাকে।খামারে গিয়ে প্রথমে কিছু দেখতে পাননি। বেরোনোর সময় অন্ধকারের মধ্যে জ্বলজ্বল করা দুটি চোখ দেখতে পান। কিন্তু অরুণা যখন পালাতে যান, তখন দেখেন, খামারের দরজাটি বন্ধ৷ ততক্ষণে ওই মহিলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চিতাবাঘটি। এদিকে মালকিনের চিৎকার শুনে ছুটে আসে চার বছরের পোষ্য মনগ্রেল প্রজাতির কুকুর ‘টাইগার’। চিতাবাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সারমেয়টি। শুরু হয়ে যায় লেপার্ড আর ‘টাইগার’-এর লড়াই। সেই সুযোগে কোনওমতে ঘটনাস্থলে থেকে পালান অরুণা। এদিকে শেষপর্যন্ত সারমেয়ের সঙ্গে লড়াইয়ের হেরে পালিয়ে যায় চিতাবাঘটি। তারপর থেকেই রীতিমত সেলিব্রিটি টাইগার৷ তবে তার এসবে হেলদোল নেই৷ সে ঘুরছে মনিবের পায়ে পায়ে৷
দার্জিলিং, সোনাদা, ঘুম জুড়ে এখন চিতাবাঘ নয়, আলোচনা হচ্ছে ‘টাইগার’কে নিয়ে। রাতারাতি বাঘের মর্যাদা পেতে শুরু করেছে পাহাড়ি কুকুরটি। অনেকেই তাকে বাড়ি বসে এসে দেখা যাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘টাইগার আদতে রয়্যাল বেঙ্গলই। নইলে ছোট্ট পাহাড়ি কুকুর, কী সাহস নিয়ে চিতাবাঘটাকে আক্রমণ করল!’’
অরুণাকে সেই রাতেই প্রথমে সোনাদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর কপালের ডান দিকে ২০টি, ডান কানে ৪টি সেলাই পড়েছে। তবে অবস্থা স্থিতিশীল। বৃহস্পতিবার বন দফতরের অফিসারেরা অরুণাকে হাসপাতালে দেখতে যান। এলাকায় গিয়ে চিতাবাঘের পায়ের ছাপও পান তাঁরা। শুক্রবার সকালে এলাকায় খাঁচা পাতা হয়েছে। দার্জিলিং বন্যপ্রাণ শাখার ডিএফও জিজু জায়েসপার বলেন, ‘‘এলাকায় খাঁচা পেতে নজর রাখা হচ্ছে।’’
দার্জিলিং পাহাড়ে চিতাবাঘের হানা নতুন ঘটনা নয়। বছর পাঁচেক আগে দার্জিলিং শহরে এক ব্যক্তির বাড়ির গ্যারাজে চিতাবাঘ ঢুকে বসেছিল। গাড়ি রাখতে গিয়ে তিনি তা টের পান। জখমও হন। পরে বনকর্মীরা সেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। গত জানুয়ারি মাসে হ্যাপিভ্যালি চা বাগানের বস্তি থেকে পোষ্যদের গায়েব হওয়ার পর খাঁচা পাতে বন দফতর।