এবার স্বনির্ভরতার পথে আরও একধাপ পা বাড়াচ্ছে বাংলা। ডিম উৎপাদন আগের থেকে অনেক বেড়েছে রাজ্যে। বহু জায়গায় ছোট ছোট খামার তৈরি করা হচ্ছে। কোচবিহার, দুই দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার ও শিলিগুড়িতে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রাণীসম্পদ বিকাশ উন্নয়ন নিগমও বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনে জোর দিয়েছে। গোটা রাজ্যের মধ্যে বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, বাঁকুড়াতেই সবথেকে বেশি ডিম উৎপাদন হয়। বাকি ডিম আমদানি করা হয় অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। আর কিছু আসে তেলেঙ্গানা ও পাঞ্জাব থেকে।
পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির দাবি, “রাজ্য সরকার যে নীতিতে এগিয়ে চলেছে, তাতে সামনের ১–২ বছরের মধ্যেই আমরা ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠব। বহু জায়গায় বড় খামার তৈরি হচ্ছে। বাড়িতে প্রতিপালনের জন্য বিভিন্ন গ্রামে হাঁস ও মুরগির ছানা বিলি করা হচ্ছে। আবার বড় পোল্ট্রিগুলিকে আর্থিক ভর্তুকি ও অন্যান্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন পোল্ট্রি হলে গ্রামীণ কর্মসংস্থানও বাড়বে”।
এখন রাজ্যে প্রতিদিনের ডিমের জোগান ও চাহিদার ফারাক প্রায় এক কোটি। আগামী আর্থিক বছরেই এই ফারাক অনেক কমে যাবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। প্রতিদিন রাজ্যে ডিমের চাহিদা প্রায় তিন কোটি। রাজ্যের উৎপাদন দু কোটি। বছরদুয়েক আগে কল্যাণী ও বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় মুরগি ও হাঁসের খামার তৈরি করে ৬০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল রাজ্য সরকার। বেশ কিছু সরকারি খামারের পরিধি বাড়িয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, মুরগির খাবার মূলত মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় থেকে কিনতে হত। কিন্তু এখন রাজ্যে ভুট্টাচাষ অনেক বেড়েছে। তিলের চাষও হচ্ছে। চলতি বছরে রাজ্যে ৪০ লক্ষ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। ২০১০–১১ সালের আগে এ রাজ্যে ভুট্টার চাষ তেমন হতই না।
প্রাণীসম্পদ বিকাশ উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, উৎসাহ প্রদান স্কিম প্রকল্প ২০১৭ অনুযায়ী ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগে ৮ লক্ষ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ১০ হাজার ডিম–পাড়া মুরগির খামারের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। শর্তসাপেক্ষে মূলধনী অনুদান ছাড়াও মেয়াদি ঋণের ওপরে সুদে ভর্তুকি, বিদ্যুৎ মাশুলে আংশিক মকুব, এমনকী স্ট্যাম্প ডিউটিতেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মুরগির সুষম খাবার প্রস্তুতকারক সংস্থারাও যাতে রাজ্যে বিনিয়োগ করে, সেই চেষ্টাও চালাচ্ছে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর।