খাঁটি ফুটবল সমর্থক মানে যে কেউ ‘আশির বাদশা’ মজিদকে ভালোবাসেন না এমনটা শোনা যায় না৷ ইস্টবেঙ্গলের শতবার্ষিকীর উদযাপনে মজিদ এসেছিলেন শহরে৷ তিনি ফিরে গেলেও শহর এখনও বুঁদ তাঁর স্মৃতিতে৷সাদা–কালোয় ঠিক তিনটি মুহূর্ত। তাতেই বাজিমাত বাদশার।
প্রথম দৃশ্য- তাঁবুতে ঢুকে পড়েছেন তিনি। ভেতরের ঘরে বসে তাঁর দেখা ‘সেরা ডিফেন্ডার’। যিনি এখন কোচ। মজিদ বাসকার এসেছেন শুনে বেরিয়ে এলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। মজিদকে দেখেই গাল টিপে আদর করে দিলেন! গালে গাল ঠেকালেন। এমন বাবলুকে সচরাচর দেখেনি ময়দান।
আর বাদশা? তাঁর ‘সুব্রতা’–কে দেখামাত্রই বুকে টেনে নিলেন। হাত ধরে তাকিয়ে থাকলেন বিস্ময়ে। হয়ত আশির দশকে ফিরে গিয়েছিলেন। একদা ময়দানের দুই যুযুধান তারকা এখন ‘বন্ধু’। একে–অপরের প্রতি প্রশংসা ঝরে পড়ল। মজিদকে দরাজ শংসাপত্র দিয়ে সুব্রত বললেন, ‘আমার কাছে এখনও ১২ নম্বর জার্সি মানেই মজিদ। অন্য কোনও ফুটবলারকে ভাবতে পারি না। প্রথম যে ম্যাচে ওকে দেখেছিলাম, সেই ম্যাচে মজিদ একটা উড়ে আসা বল আমার মাথার ওপর দিয়ে ফ্লিক করে গোল করে দিয়েছিল। তখনই বুঝেছিলাম, অনেক বড় মাপের ফুটবলার। ওর ড্রিবল, বল কন্ট্রোল অসাধারণ।’ পাশে বসে মজিদ তখন মিটিমিটি হাসছেন। সুব্রত বলেই ফেললেন, ‘একটা সময়ে ওকে আটকাতে না পেরে শরীরের যাবতীয় শক্তি দিয়ে কড়া ট্যাকল করতাম। তখন মজিদ বলত, কেন এত মারছি ওকে? আমার টার্গেট থাকত, মজিদ বল রিসিভ করার আগেই যেন বলটা কেড়ে নিতে পারি।’ শুনে হো–হো করে হেসে উঠলেন মজিদ। তারপর বললেন, ‘দেখ সুব্রতা, আমরা দুজনেই অবসর নিয়েছি। আমার কোনও অভিযোগ নেই তোমার প্রতি। ভুলে যাও সেসব দিনের কথা। তোমার প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। ভাইয়ের মতো ভালবাসি তোমায়।’ আবার জড়িয়ে ধরলেন সুব্রতকে। তখন সুব্রতর মুখে শিশুসুলভ হাসি।
দ্বিতীয় দৃশ্য- মহমেডান সমর্থক। লুঙ্গি–গেঞ্জি পরেই জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন মহমেডান তাঁবু সংলগ্ন অঞ্চলে। সেই ‘পাগলাভাই’কে দেখেও চিনলেন বাদশা। ‘কেমন আছিস পাগলা?’ পরিষ্কার বাংলাতেই জিজ্ঞেস করলেন। ‘পাগলা’–র চোখে আনন্দাশ্রু। তাঁবু থেকে বেরিয়ে গাড়ি পর্যন্ত ‘পাগলা’–র সঙ্গেই গল্প করতে করতে গেলেন মজিদ। পরে সাদা–কালো সমর্থক বলছিলেন, ‘বড় ভাইয়ের মতো এখনও সম্মান করি। ইস্টবেঙ্গল মাঠে ঢুকতে পারতাম না। মজিদভাই আমাকে ঢুকিয়ে দিতেন। যতদিন বাঁচব, ওঁকে ভুলব না।’ মজিদও ভোলেননি গত ৩২ বছরে তাঁকে।
তৃতীয় দৃশ্য- মজিদের সময়ের একজন মালিই এখনও বেঁচে মহমেডানে। ক্যান্সারে আক্রান্ত দ্বৈতারি খাটুয়াকে দেখে মজিদ ঠিক চিনতে পারলেন। বুকে টেনে নিলেন ‘বাবা কেমন আছি’ বলে। ভাঙা বাংলাতেই দ্বৈতারির সঙ্গে কথা বললেন বাদশা। খোঁজ নিলেন ‘সংসার’ করেছেন কি না।
সোমবার লাল–হলুদের পর মঙ্গলবার সাদা–কালোয় প্রবেশ বাদশার। কলকাতায় যে ক্লাবে সবথেকে বেশি সময় খেলেছেন। ৬ বছরে ১৬ খানা ট্রফি দিয়েছেন মহমেডানকে। সেই ক্লাব তাঁকে সংবর্ধিত করল। সচিব কামারুদ্দিন, কর্তা বেলাল আমেদের উপস্থিতিতে স্মরণীয় করে রাখল মজিদ–আগমন। ক্লাবের তরফে কাশ্মীরি শাল, স্মারক, মজিদের পোট্রেট, ১২ নম্বর সাদা–কালো জার্সি এবং মা দুর্গার ছবি দিয়ে। শারদীয়ার আগে সাদা–কালোয় ইদের তোফা দিয়ে গেলেন স্বয়ং মজিদ বাসকার।