ঝড় শেষ হল। এই ঝড়ের নাম ‘গেইল ঝড়’। এই ঝড়ের সামনে সব কিছু খড়কুটোর মত উড়ে যেত। তবে বিশ্ব আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই ক্যারিবিয়ান ক্যারিশমা দেখতে পাবে না। ভারতের বিরুদ্ধে খেলে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চ থেকে অবসর নিয়ে নিলেন। আর আবেগে ভেসে গেল ভূ-বলয়। ২০ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে ইতি টানলেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তিনি স্বমহিমায় হাজির ছিলেন বিশ্ববাসীর কাছে। মাত্র ৪১ বলে ৭২ রানের অনবদ্য ইনিংস সাজানো ছিল ৫টি ছয় ও ৮টি চারে।
১৯৭৯ সালে জ্যামাইকাতে জন্ম নেন ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল। ছোট থেকেই তাঁর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দেখা দেয়। সেই ভালোবাসার তাড়নায় ধীরে ধীরে ক্রিকেটকেই নিজের জীবনের অঙ্গ করে তুলেছিলেন তিনি। ১৯ বছর বয়সে জামাইকার পক্ষ হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটান। তাঁর প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে ধীরে ধীরে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের মাত্র এগারো মাস পরেই ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক ঘটে তাঁর। তারপর এই ২০ বছরে ভেঙে দুরমুশ করেছে বহু রেকর্ড। তাঁর খেলা দেখতে বসলে মনে হয়, বলকে মাঠের বাইরে পাঠানোই তাঁর মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে বারবার সাফল্য পেয়েছেন এই কিংবদন্তি।
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটেই শতরানের রেকর্ড আছে তাঁর নামের পাশে। একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম দ্বি-শতরানের রেকর্ডও জ্বলজ্বল করছে। বিশ্বের ১১টি দেশের মাটিতে শতরান করেছেন তিনি। ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে লারাকে টপকে সর্বোচ্চ রানের (১০,৪৮০) রেকর্ড তাঁর নামের পাশে। ওয়ানডেটে মোট ২৫টি শতরান ও ৫৪টি অর্ধশতরান পুড়েছেন তিনি নিজের ঝুলিতে। উল্লেখযোগ্য অন্যতম আর রেকর্ড হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ৩৩১টি ছক্কা মারার রেকর্ড। এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩১৭ রানের পাহাড়। এই মারকুটে ব্যাটসম্যানের টেস্টের রেকর্ডও নেহাত খারাপ নয়। মাত্র ১০৩টি ম্যাচ খেলে ৭০০০ বেশি রান। আর টি-২০-তে তাঁর বিধ্বংসী খেলার কথা অজানা নয় কারোর। ১৪২.৮ স্ট্রাইক রেট তাঁকে বিশ্ব মঞ্চে এগিয়ে রেখেছে।
এই কিংবদন্তির বর্ণময় ক্রিকেট জীবনের ইতি ঘটল। মাঠে তাঁর জাদু আজীবন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে থাকবে। বিভিন্ন দেশে তিনি টুর্নামেন্ট মাতিয়ে রাখতেন। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা বারবার তাঁকে মাঠে ফিরিয়ে এনেছে। বাদ পরেও আবার ফিরে এসেছেন। সারা বিশ্ব বারবার মেতে উঠেছে তাঁর ব্যাটের ছন্দে।