‘পাঙ্গা নিলেই আমি চাঙ্গা হয়ে যাই’ – যতবারই বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছেন, ঠিক এ কথা বলেই রুখে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। লোকসভা ভোটের আগেও কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার লড়াইয়ে ধর্ণা অস্ত্র ব্যবহার করেই নৈতিক জয় পেয়েছিলেন তিনি। এবার রাজ্য জুড়ে দুর্গাপুজোগুলির ওপর আয়কর বসানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ধর্ণায় বসে তৃণমূল।
মঙ্গলবার পুজো কমিটিগুলির কাছে আয়কর দফতর থেকে কর দেওয়ার নোটিস পাঠানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূলের বঙ্গজননী বাহিনী সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যারে দিনভর ধর্না দেয়। বক্তব্য পেশ করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বঙ্গজননী বাহিনীর চেয়ারম্যান কাকলি ঘোষদস্তিদার। যদিও চাপের মুখে পড়ে আয়কর দফতরের তরফ থেকে গোটা ঘটনাটিকে মিথ্যে রটনা বলা হয়েছে। কোনও দুর্গাপুজো কমিটিকে বিপদে ফেলা বা সমস্যা তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করে মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পুজোর জিজিয়া কর নিয়ে আয়কর দফতর তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে প্রেস বিবৃতি দিয়েছে। আমি আপনাদের সবাইকে জানাতে চাই, ওই বিবৃতির নামে তারা কিছু দাবি করেছে। যা প্রমাণ করে যে, তারা ঠিক তথ্য দেয়নি। গত বছরও আয়কর দফতর পুজো কমিটিগুলিকে নোটিস পাঠিয়েছিল। ঢাকি, পুরোহিত ছাড়াও গ্রামবাংলার আরও অনেক মানুষ পুজো এবং মণ্ডপ তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন। পুজো কমিটিগুলির মাধ্যমে তাঁদের কাছ থেকে কর নেওয়া আসলে ‘টেরিবল ডিজাস্টার স্কিম’।’
মমতার অভিযোগ, ‘আমাদের সংস্কৃতি এবং দুর্গাপুজো উৎসবের ওপর এ এক আক্রমণ। আমি জানি না, জেনে অথবা না জেনে এই কাজ করা হয়েছে কিনা। তবে, এটা ভীষণরকম কুরুচি। যখন সমস্ত ধর্মের মানুষ দুর্গোপুজোয় অংশ নেন, তখনই এ এক জাতীয় উৎসবের চেহারা নেয়।’ তিনি এই আবেদনও করেছেন যে, উৎসবের ওপর থেকে এই কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত।
গতকালের ধর্ণায় সঞ্চালনা করেন মন্ত্রী শশী পাঁজা। বক্তব্য পেশ করেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, স্মিতা বক্সি, জুঁই বিশ্বাস, মালা সাহা, সোমা চৌধুরি, অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে গতকাল এঁরা সকলেই আয়কর দফতরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মহিলা সমর্থকও আসেন। সকলের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— এভাবে কর আদায় করা যাবে না; আমরা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করছি।
গতকাল সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যারে একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের পক্ষ থেকে আসেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়। তিনি ক্লাবের সহ-সভাপতি। তাঁর বক্তব্য, ‘আপনাদের বাড়ির কাজের লোক যে কাজ করেন, তাঁর থেকে কখনও আয়কর নেওয়া হয়? উৎসব নিয়ে কোনও কর হয় না। কেউ একজন প্রতিমার টাকা দিল, আবার কেউ দিল প্যান্ডেলের টাকা। যারা দিচ্ছে, তারাই তো কর দেয়। পুজো কমিটিগুলি কেন দেবে? সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের প্রতিবাদ এখানে।’
বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের সম্পাদক সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘৮১ বছরের পুজো। এখন নাকি আমাদের কর দিতে হবে! বাজেট কমাতে বাধ্য করা হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। লাইট, প্যান্ডেল ও প্রতিমার জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয়ে যায়। আমরা হিসেব রাখি। হিসেব ছাড়া পুজো হয় না। টিডিএস কাটতে বলছে। কর আমরা দিতে পারব না।’ সুরুচি সঙ্ঘের পক্ষ থেকে এসেছিলেন জুঁই বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে গণেশ পুজো হয়। তারা কি কর দেয়? আসলে মমতাদিকে হেনস্থা করতেই এসব করা হচ্ছে।’
অন্যদিকে, মঙ্গলবার ‘আমার গর্ব মমতা’–র ফেসবুক থেকে একটি কার্টুন পোস্ট করা হয়েছে। তাতে প্রশ্ন করা হচ্ছে— এবার কি দুর্গাকেও কৈলাস থেকে আসার সময় আধার আর প্যানকার্ড নিয়ে আসতে হবে? মা দুর্গাকেও ট্যাক্স দিতে হবে? দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আয়কর দফতরের নোটিসের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কার্টুনে একজন প্রতিমাকে জিজ্ঞেস করছেন, আপনার প্যানকার্ড, আধার কার্ড দেখান। শেষ কবে আইটি রিটার্ন ফাইল করেছেন?