সমস্যায় পড়েছেন? কেউ আপনাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে? তাহলে ‘দিদিকে বলো’। গোটা বাংলা জুড়ে এটাই এখন মুশকিল আসানের নয়া মন্ত্র। অনিল কপূর অভিনীত ‘নায়ক’ সিনেমায় যেমন যে কোনও অভাব-অভিযোগ নিয়ে ফোন আসত একদিনের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। আর সেই ফোন পেয়েই অকুস্থলে ছুটে গিয়ে সমস্যার সমাধান করতেন তিনি। সম্প্রতি সেই কায়দাতেই রাজ্যবাসীর নানা সমস্যার সমাধান করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সরাসরি ফোন করে নিজেদের মনের কথা জানানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাতে আপ্লুত মানুষ। ফলে অভূতপূর্ব সাড়াও মিলছে এতে। শুধু তাই নয়। এই কর্মসূচী সংগঠনের তৃণমূল স্তরে কর্মচাঞ্চল্য তৈরি করেছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ- দলের বিধায়ক থেকে রাজ্য নেতৃত্ব, দিদিকে বলো কর্মসূচীর এমন মূল্যায়নে কমবেশি একমত সবাই। তবে, প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক-এর নিষেধ রয়েছে। তাই কেউ কেউ আভাসে-ইঙ্গিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকল্পের গুণগান করলেও প্রকাশ্যে তা নিয়ে মন্তব্যে নারাজ।
রাজনৈতিক আধিপত্য প্রশ্নাতীত। রাজ্যে ক্ষমতায় বসার পর থেকে উপর্যুপুরি নির্বাচনে সাফল্য শুধু নয়, প্রতিপক্ষকে ছাপিয়ে গিয়েছে জনসমর্থন। যে কোনও স্তরের ভোটে বিজয় সম্পর্কে নিশ্চিন্ত ছিল তৃণমূল। পাশাপাশি বিরোধী বাম ও কংগ্রেস কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে সাংগঠনিক ভাঙনে টালমাটাল। এই পরিস্থিতিতে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনৈতিক মেরুকরণে ভর দিয়ে বিরোধী পরিসরের দখল নিয়েছে বিজেপি। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে বাংলায় মেরুকরণের সুবাদে কিছু আসনও জিতে নিয়েছে গেরুয়া শিবির।
দলের ফলাফল পর্যলোচনা করতে গিয়ে নানা কারণের মধ্যে জনসংযোগের অভাবকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ফলাফল পর্যলোচনায় তিনি সোজাসাপ্টা সেই ত্রুটির দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর নির্দেশেই পেশাদারি রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাকও জনসংযাগের ওপরেই জোর দিয়েছে। সেই অনুসারে তৈরি হয় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচী।
গত দুই সপ্তাহ ধরে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা দিদিকে বলো জনপ্রিয় করতে নিজেদের এলাকায় সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে যেতে শুরু করেছেন। নিজেদের অভাব অভিযোগ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য হেল্পলাইন নম্বর ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত নেতা থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই। ইতিমধ্যেই আইপ্যাকের পাঠানো তালিকা মেনে বিধায়ক-মন্ত্রীরা জনসংযোগে নিজেদের এলাকায় বাসিন্দাদের বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া সারছেন।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মতে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রশ্নে সংগঠনের মধ্যে একটা শৈথিল্য এসে গিয়েছিল। দলের এক সাংসদের মতে, রাজনৈতিক কর্মসূচী বলতে দলের কর্মীরা বোঝেন কেবল, রক্তদান, বস্ত্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। কিন্তু বিজেপিকে পিছন থেকে পরিচালিত করছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। তারা সুকৌশলে ধর্মের নামে সামাজিক বিভাজন তৈরি করছে। এর মোকাবিলায় মানুষের ঘরে পৌঁছে যেতে হবে।