বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ঠিক তেমনই চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুয়ের মিলনের ফলে ক্রমেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে। এই অবস্থায় বাজারে বিক্রিবাটা নেই। গাড়ি-স্কুটার হোক বা সংসারের জিনিসপত্র, কারখানায় যা তৈরি হচ্ছে, তা-ই বিকোচ্ছে না। তাই নতুন লগ্নীও আসছে না। চড়া হারে কর দিতে নারাজ শিল্পপতিরা এ দেশের বদলে বিদেশে কারখানা খুলতে বেশি আগ্রহী। ঝিমিয়ে পড়া এই অর্থনীতি নিয়ে প্রথম মুখ খুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন, আগামী পাঁচ বছরে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নীর লক্ষ্য স্থির করছে তাঁর সরকার।
তবে দেশের বাজারে বিক্রিবাটা যখন কমতির দিকে, তখন শিল্পপতিরা নতুন লগ্নী করবেন কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য প্রধানমন্ত্রী দেননি। একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতে আস্থা রাখুন। দেশের বাজারের দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনায় ভরসা রাখুন।’ গাড়ি শিল্পের ঝিমিয়ে পড়াকেও ‘সাময়িক’ বলে লঘু করার চেষ্টা করেছেন মোদী! তবে প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলুন, তাঁর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায়ের দাবি, চলতি অর্থ বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশই থাকবে, ৭ শতাংশ নয়। যদিও মোদী সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো ৫ লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতিতে পৌঁছতে হলে ৮ শতাংশ বৃদ্ধির দরকার বলে বিবেকের হিসেব। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে জিএসটির হার, আয়কর এবং কর্পোরেট কর কমানোর শর্ত রেখেছেন তিনি।
বাজেটের আগে শিল্পমহলও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে একই রকম দাওয়াইয়ের দাবি তুলেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু মেলেনি। গত সপ্তাহেও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিল্পমহল দাবি তুলেছে, এক লক্ষ কোটি টাকার ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ’ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, শিল্পমহলের ‘অ্যানিম্যাল স্পিরিট’ জাগিয়ে তুলতে তিনি যত দূর সম্ভব যাবেন। তাঁর যুক্তি, ‘বাজেট শুরুও নয়, শেষও নয়। আমরা রোজ সমস্যা বুঝছি। সমাধানের চেষ্টা করছি।’ কিন্তু ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ’-এর টাকা আসবে কোথা থেকে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ, সরকারি সংস্থার সম্পদ বেচে ৩ লক্ষ কোটি টাকা তোলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মোদীও বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণ সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু বাজারে যখন চাহিদা পড়তির দিকে, শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে, তখন বিলগ্নিকরণ বা সরকারি সংস্থার সম্পদ বেচেও এত টাকা ঘরে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।