ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ উৎসবের অঙ্গ হিসেবে আজ বিকেলে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গলের চমকপ্রদ অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে হাজির থাকবেন মজিদ বাসকার। সমর্থকদের উন্মাদনা তুঙ্গে।
প্রায় তিন যুগ পরে ইস্টবেঙ্গল মাঠে ফের মজিদ বাসকর। তাঁকে দেখার জন্যই সোমবার ক্লাব-তাঁবুতে ভিড় জমিয়েছিলেন অসংখ্য লাল-হলুদ সমর্থক। সাংবাদিক বৈঠকের পরে ইস্টবেঙ্গলের ১২ নম্বর জার্সি পিঠে চাপিয়ে দু’ বার মাঠে ঢোকার চেষ্টা করেন মজিদ। আশির দশকে ময়দানের বাদশার খেলোয়াড় জীবনের সেই ‘জাদু-মুহূর্ত’ যখন ভেসে উঠবে মঞ্চের পাশের পর্দায় তখন গত একশো বছরের জীবিত অধিনায়কদের সঙ্গে স্টেডিয়ামে হাজির থাকবেন কোচেরাও। প্রত্যেক অধিনায়কের নেতৃত্বে ক্লাবের গৌরবের জয়গাথাও দেখা যাবে পর্দায়। লাল-হলুদে উৎসব, আর ‘পঞ্চপাণ্ডব’-এর গৌরবের মুহূর্ত থাকবে না, সেটা হয় না কি! সেই স্মৃতিও ফিরবে, যখন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া হবে সম্মান। উদ্বোধন হবে অরিজিৎ সিংহের ‘ফুটবল মানেই ইস্টবেঙ্গল’ গান দিয়ে।
মজিদকে এত দিন পর কলকাতায় ফিরিয়ে আনার মূল কারিগর ক্লাবের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বলছিলেন, ‘‘মজিদকে আনার প্রস্তুতি আমরা শুরু করেছিলাম দেড় বছর আগেই। যখন আমরা শতবার্ষিকী উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। সম্মানিত করার জন্য দু’জন ভারতীয় ও এক জন বিদেশি ফুটবলারের নাম ভাবতে হয়েছিল। মজিদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। ওর বিকল্প এখনও পাওয়া যায়নি ভারতীয় ফুটবলে। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের মাধ্যমে ইরানের ফুটবল সংস্থায় যোগাযোগ করা হয়েছিল মজিদের ফোন নম্বর জোগাড় করার জন্য। কিন্তু আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ করেই মজিদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে যায়। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে দিয়ে এক দিন ফোন করানো হল। কিন্তু ও রাজি হল না কলকাতায় আসতে। জামশিদ নাসিরিও ব্যর্থ হল। আসলে কলকাতায় ফেরা নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিল। কিন্তু আমাদের কাছে মজিদকে আনাটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সচিব কল্যাণ মজুমদার নিয়মিত তাগাদা দিতেন। শেষ পর্যন্ত মজিদকে রাজি করাতে আমরা সফল হই।’’
মনে হাজার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে কলকাতার বিমানে উঠেছিলেন বাদশা। পুরনো শহর কি তাঁকে চিনতে পারবে? মনে উঠেছিল ঝড়। ভেবেছিলেন বিমানবন্দরে তাঁকে দেখার জন্য অল্প কয়েকজন ভক্ত বুঝি উপস্থিত থাকবেন। শনিবার গভীর রাতে দমদম বিমানবন্দরে পা রাখার পরে ভুল ভাঙে ইরানি-তারকার। অসংখ্য ভক্তের উপস্থিতি দেখে বিস্মিত হয়ে যান বাদশা। সেই কবে কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে এসে দেখলেন এখনও তিনি জনতার মনেই রয়ে গিয়েছেন। মজিদ বলেন, ‘‘একটা ইতিহাস তৈরি হতে দেখলাম। মাঝরাতে এত সংখ্যক মানুষ যে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন ভাবিনি।’’কলকাতায় না এলে মজিদ সত্যিই জানতে পারতেন না, তাঁকে এখনও আগের মতোই ভালবাসেন ভক্তরা। সমর্থকদের হৃদয়ে এখনও তিনি বাদশা হয়েই রয়ে গিয়েছেন।