৭০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করলে, জানা অজানা হাজার তথ্য পাওয়া যায়৷ রাজতন্ত্রের যুগে নিজের অধিকার, বা নিজের জন্য ক’জন নারী প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছিলেন তার উদাহরণ পাওয়া খুব দুস্কর! ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে গেলেই জানা যায়, তখনকার নারী চরিত্রগুলোর অন্দরমহলে এবং পর্দা প্রথার আড়ালেই জীবন কাটিয়ে দেবার এক প্রবণতা ছিল। যুগ কালের নিয়মে তা যেন আষ্টেপৃষ্টে বেধে রেখেছিল নারী সমাজকে। কিন্তু ইসাবেলার কাহিনী একটু অন্যরকম। তখনকার সময়েও নিজের ঔদ্ধত্ব, নিজের মানকে বাঁচিয়ে রাখতে, নিজের ইচ্ছেকে সম্মান জানাতে পিছপা হননি। সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বইচ্ছায় বেঁচেছেন। তবে তিনি তার স্বামীকে খুন করার জন্য ইতিহাসের পাতায় কুখ্যাত হয়ে আছেন।
ইসাবেলা ১২ বছর বয়সে রাজা এবং শক্তিশালী ব্যারোনিয়াল দলগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের সময় ইংল্যান্ডে এসেছিলেন। ১২৯৫ সালে তার জন্ম।
ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের সংগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার পর তিনি ইংল্যান্ডের রানী হিসেবে ভূষিত হন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ‘শি-উলফ অফ ফ্রান্স’ বলেই পরিচিত ছিলেন।
স্বামী রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ড ছিলেন একজন সমকামী। ফলে স্ত্রী হিসেবে নিজের প্রাপ্য সম্মানটুকু ইসাবেলা ঠিকমতো তো পেতেনই না, উল্টো রাজার সঙ্গীরা তাকে অপমানও করতো। সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করলেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই ফুঁসছিলেন ইসাবেলা। এমন পরিস্থিতি পার করতে থাকাকালেই জন্ম নেয় ইসাবেলার সন্তানেরা, যাদের মাঝে ছিলো ভবিষ্যৎ রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডও।
স্বামীসঙ্গ বঞ্চিত হতে হতে একসময় পরকীয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েন ইসাবেলা, সম্পর্ক গড়ে তোলেন নির্বাসিত ব্রিটিশ দেশদ্রোহী লর্ড রজার মরটাইমারের সাথে, ১৩২৫ সালে। আস্তে আস্তে ক্ষোভের পরিমাণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে প্রতিশোধ গ্রহণকল্পে তিনি আক্রমণ করে বসেন ইংল্যান্ডে, সিংহাসনচ্যুত করেন তার স্বামীকে। এরপর নিজেই রাজপ্রতিভূ হয়ে ছেলে তৃতীয় এডওয়ার্ডের পক্ষে রাজ্য চালাতে থাকেন। এমনকি নিজের স্বামীকে নৃশংসভাবে খুনও করান তিনি।
এডওয়ার্ড সাবালক হয়ে উঠলে সে তার মাকে সিংহাসনচ্যুত করে। এভাবেই শেষ হয় ফ্রান্সের বিখ্যাত এই নারীর রানী-অধ্যায়ের। ইসাবেলার এ শাসনকাল মাত্র চার বছরের মতো স্থায়ী হয়েছিলো। অবশ্য তার প্রচেষ্টাকে একেবারে বৃথা বলা যাবে না। কারণ এরপর টানা পঞ্চাশ বছর ধরে ইংল্যান্ড শাসন করেছিলেন রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড।
এভাবেই শেষ হয়েছিল ইসাবেলার অধ্যায়, নিজের স্বামীকে হত্যার দায়, নিজের মানের বলি দিয়েও, হাজার প্রতিকুলতার মাঝে কুখ্যাত রানী হিসেবে হলেও নিজেকে ইতিহাসের পাতায় সযন্তে রেখে গেছেন।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত