‘তোমরা গেলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধু রে…।’ ভূপেন হাজারিকার এই গানটিই বিশ্ব হস্তি দিবসের মূল সুর। স্থলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে হাতিই সবচেয়ে বড়। একটা সময় পৃথিবীজুড়ে কয়েক শ’প্রজাতির হাতির বিচরণ থাকলেও কমতে কমতে তা এখন নেমে এসেছে মাত্র চারটিতে। এর মধ্যে দুটি আবার বিলুপ্তপ্রায়। ‘আপনা মাঁসে হরিণা বৈরি’বচনটি আর হরিণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই, এখন হাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ভারতীয় সভ্যতার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে হাতি, সেই সিন্ধু সভ্যতার আদিকাল বা তারও আগে থেকে। প্রাগৈতিহাসিক মানবগোষ্ঠীর চিত্রশিল্পীরা হাতিকে এঁকেছেন গুহার দেওয়ালে। মধ্য এশিয়ার ঊষর প্রান্তর থেকে এসে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী মানুষ, তথাকথিত আর্যরা যখন পঞ্চনদের দেশে গেঁড়ে বসল, তখন দেবতাদের রাজা ইন্দ্র ঘোড়ায় টানা রথ থেকে নেমে
হস্তীতে আসীন হলেন। ঋগ্বেদের যুগে হাতির উল্লেখ সামান্য, কেননা, সে সময় আর্যরা হাতির সঙ্গে তেমন পরিচিত হয়নি। হাতি তাদের বর্ণনায় ‘মৃগহস্তহীন’- হাতযুক্ত চতুষ্পদ! অথচ, সিন্ধুসভ্যতার বাসিন্দাদের কাছে হাতি অতি পরিচিত, খুব সম্ভবত তাদের পোষ মানিয়ে রীতিমতো কাজে লাগানো শুরু হয়ে গিয়েছে। আর্যরা বিজিতদের কাছ থেকে অনেক কিছুর মতোই হাতিকে পোষ মানানোর ও তাকে কাজে লাগানোর ব্যাপারটা শিখে নিয়েছিল। অথর্ববেদের সময় দেখা যাচ্ছে, তারা হাতি নামক জন্তুটির সঙ্গে ভালভাবেই পরিচিত হয়েছে। আরও পরে, ইন্দ্রের বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে ঐরাবত- কালো, জলদগর্ভ, মৌসুমি মেঘের কল্পরূপ। আর, ইন্দ্র বজ্র-বৃষ্টির দেবতা। প্রাক্-বৌদ্ধযুগ থেকেই হাতি আরও ব্যাপকভাবে প্রজননশক্তির রূপক। যেমন, ভবিষ্যতের বুদ্ধ স্বর্গ থেকে শ্বেতহস্তী রূপে নেমে এসে রাজরানি মায়াদেবীর স্বপ্নে তাঁর গর্ভে জাত হন। একই সঙ্গে বাস্তবে নাগরিক জীবনে, রাজকার্যে, যুদ্ধে হাতি হয়ে দাঁড়ায় অপরিহার্য। আজও হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে নীলগিরির জঙ্গল, পুবের আসাম-অরুণাচল থেকে পশ্চিমে সহ্যাদ্রির বনভূমি দাপিয়ে বেড়ায় হাতির দল। হাতির বদলে বাঘকে ভারতের জাতীয় পশু ঘোষণা করায় হস্তীপ্রেমীদের ক্ষোভ আছে। আবার উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের দখলে চলে যাওয়া বনভূমিতে সঙ্কুচিত বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে এসে হাতিদের তাণ্ডব এখন অহরহ সংবাদের শিরোনামে। ডাঙায় বসবাসকারী সর্ববৃহত্ প্রাণীটি অতএব এক আকর্ষক ও প্রয়োজনীয় চর্চার বিষয়।
আন্তর্জাতিক হস্তি দিবস উপলক্ষ্যে এসব নিয়েই একটি টুইট করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লিখেছেন, ‘আজ বিশ্ব হস্তী দিবস। হাতি আমাদের জাতীয় হেরিটেজ প্রাণী।আমাদের সরকার হাতিদের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০১২ য়, জলপাইগুড়িতে আমি এই বাচ্চা হাতিটির নাম দিয়েছিলাম ‘বর্ষণ’’।