ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে রথতলা বাজারে যেতাম। মুরগীর দোকানে জ্যান্ত ক্যাঁক ক্যাঁক করা একটা এক কেজির মুরগী বেছে গ্যাছাং করে বঠিতে কাটতো কাকু। আমি বাবার পেছনে গিয়ে দাঁড়াতাম বা বাসের দিকে তাকাতাম। কিন্তু প্যাকেটটা হাতে করে নিজেই বাড়ি নিয়ে আসতাম। কারণ মা ঠ্যাংটা আমাকেই দেবে। তখন সিলেক্টিভ ফিল্যেক্টিভ অতশত বুঝতাম না। ঠ্যাং কুচিকুচি করে থালায় যেত।
কুরবানির মানে যখন বুজলাম তখন বড় বড় রেডমিট সাবার করে দিই। ত্যাগের মাংস নাকি বেশী সুস্বাদু। দুমবা আজ ও না খাবার অতৃপ্তি নিয়ে চলি।
এখন ইউরিক অ্যাসিড বেশী নাকি শরীরে। নো ‘বেশী’ মাংস। মাংস এখন রাজনৈতিক ও বটে। এখন গুড মর্নিং আর গুডনাইট মেসেজ এর থেকে ও বেশি ঈদ মুবারক মেসেজ পাঠাই। পাঠাতে হয় বার্তা দিতে। একা নও, আছি তোমার সাথে।
আজ টিভির রিমোটের ব্যাটারি কিনতে বাজারে গেছিলাম। এই বাজারটা নয়ডাতে হলে ও, চালায় বাঙালিরা। মানে দিনহাটা, মুর্শিদাবাদ, মালদা, হুগলি থেকে। এখানে আসাদুল ও আছে, কিশোর ও আছে। কয়েকটা টাকা বেশী পাওয়ার আশায় রাজ্যে ছেড়েছে। ওই আমার মতো আরকি।
আজ বাজারে ঢুকতেই ‘ও দাদা’, ‘দাদা এদিকে’, ‘দাদাভাই’,’ভাইয়া’ ডাকে গমগম করতে থাকে চারদিক। ভোটে জিতে এলে এভাবে মানুষ ডাকবে আমায়? আমি একটু ঘাবড়িয়েই যাই বটে।
আসাদুল, রেজ্জাক, কুতুবের আকুতি আজ। বাকি যে কিশোর, অমল আছে ওরা ও আজ ফেস্টিভ্যাল আঁচ নিচ্ছে। ‘দাদা গো’ আজ যে দামে দিচ্ছি জিও ও সেই দামে ডেটা দেবে না। কাল আর পরশু বন্ধ দোকান। নিয়ে যাও।
বউ বলেছে ফ্রিজে সব্জি যা আছে তাতে ফ্রিজকে সাকাহারি বলাই যায়। তবু কী মনে হলো, নিয়েই নিলাম এক ব্যাগ। কাল ঈদ বলে কথা।
বাজার ওদের হলে ও এটা হিন্দুস্তান। এখানে হিন্দিভাষী আছে, ভোজপুরিভাষী ও। এদের প্রয়োজন পরলে বাংলাদেশী ও দেগে দেওয়া হয় আবার। আমরা যারা প্যান্ট শার্ট ধোপদুরস্ত বাঙালি তারা কিচ্ছুটি প্রতিবাদ করিনা। লুঙ্গি, দাড়ি, গরিব হলে তো কথাই নেই। নির্ঘাত বহিরাগত।
তা আজ এই গোটা বাজারে খুশির কাউন্টডাউন। সবকিছু ডিস্কাউন্টে। হিন্দু মুসলমান সব লুটে পুটে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাবসাতে বোধহয় ধর্মের চাপ থাকে না।
২০০টাকায় এক ব্যাগ সব্জি, ব্যাটারি, টুকিটাকি নিয়ে যখন বেরোতে যাবো, কি মনে হলো, চিৎকার করে সব্বাইকে ঈদ মুবারক বলে দিলাম। হিন্দু ছেলে, নয়ডার ছেলে জয় শ্রী রাম ছাড়া ও ঈদ মুবারক বলতে পারে শুনে গোটা বাজার ঈদ মুবারক ঈদ মুবারক ঈদ মুবারক বলে সম্বোধন করতে লাগলো। অনেকে হাঁ করে তাকিয়ে, অনেকে মাথা নিচু করে এদিয়ে গেল।
বরফটা গলিয়ে দেওয়ার দরকার উষ্ণতা দিয়ে৷ বরফটা দিল্লি বম্বে কলকাতায় একই অবস্থায় আছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বরফপথ আরো মসৃণ করছে। গলানোর চেষ্টা না।
আমি এই কুরবানির ঈদে আরো বেশী করে সব্বাইকে শুভেচ্ছা জানাবো। একা নয়, আমরা আছি তোমার সাথে। বিরক্ত হবেন না।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত