আমরা কি বর্তমান ভারতে সত্যিই স্বাধীন? সংবিধানের ১৯(ক) ধারায় আমাদের যে বাক স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটা কি আমরা পালন করতে পারি? সরকার বিরোধী আওয়াজ তুললে আমাদের কি কন্ঠরোধ করার চেষ্টা হয় না? এইসব ধাঁধার মধ্যে দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াচ্ছি। এমনই কিছু ঘটনা আমাদের সামনে উঠে আসে যা দেখে এই প্রশ্নগুলো সাধারণ মানুষের মাথায় ঘোরে। ঠিক এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে এইদিন। বিখ্যাত সাংবাদিক প্রণয় রায়ের কন্যার এক বিস্ফোরক চিঠির বয়ানে আবারও একবার প্রশ্নগুলো মানুষের মনে তুলে দিয়ে গেল।
প্রণয় রায়ের কন্যার এক বিবৃতি সামনে এসেছে। যা সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল আবারও। প্রসঙ্গত, মুম্বই এয়ারপোর্টে আটকে দেওয়া হয় প্রণয় রায় ও তাঁর পরিবারকে এবং তাঁকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেয়নি এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ। যারপরই এক বিস্ফোরক বিবৃতি দেন প্রণয়ের কন্যা। তিনি লেখেন, ‘এটি খুবই হৃদয়ব্যথিত। আমরা প্রণয় রায় ও রাধিকা রায়ের ৭০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ৫ দিনের বিদেশ সফরের প্ল্যান করেছিলাম। সেই কারণে এয়ারপোর্টে অভিবাসনের জন্য আমরা উপস্থিত হই। আমাদের ফেরার জন্য ১৫ তারিখের টিকিটও কাটা ছিল। কিন্তু হঠাৎই অভিবাসনের সময় আমাদের বলা হয় যে, আমার বাবা-মা দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি তাঁরা দিতে পারবেন না। কারণ হিসেবে দেখানো হয় এনটিভি-র বিরুদ্ধে যে মামলা চলছিল সেটায় সিবিআই ছাড়পত্র দেয়নি।’
এরপরই তিনি কেসটি সম্পর্কে জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই কেসটি কিছুই নয়। একটি লোন সংক্রান্ত। যে লোনের সুদ তাঁর বাবা-মা সময়মতো দিয়ে এসেছেন। শেষ দুবছর ধরে যে কেসটা চলছে সেই কেসে পূর্ন সহযোগিতা করেছেন তাঁর বাবা-মা এবং তারমধ্যেও তাঁরা প্রয়াশই বিদেশে গেছেন। সিবিআই বা কোর্টের তরফে কখনই তাঁদের জানানো হয়নি যে তাঁরা দেশ ছেড়ে যেতে পারবেন না। তাঁরা তাঁদের এই টানাপোড়েনের জন্য এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন। কোনটা সত্যিই সেটাই নির্ধারণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।’
এর পাশাপাশি তিনি সরকারের অসহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘সরকার তাঁদের এই কেসটি পুনরায় সমাধানের জন্য অস্বীকার করেছে এবং ২ বছর এটি ঝুলিয়ে রেখেছে। আমার বাবা-মা সম্পূর্ণভাবে তাঁদের নিজস্ব ও ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় অর্থনৈতিক ব্যাপারে স্বচ্ছতা বজায় রেখেছেন। কিন্তু সরকার তা বজায় রাখতে অস্বীকার করেছে। আমার বাবা-মা সবসময়ই এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেছেন।’
সরকারের এই কথা স্মরণ করার পরই তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন যে, ‘যখন এই সরকার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে না চায়, তখন সরকার তার জনগনের থেকে কি আশা করে। এই সময়টা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও ভয়ের। সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সরকারই যখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো বিষয়ে সহাবস্থান করে না তখন সেটি দেশের জন্য খারাপ সময়।’
তিনি সরকারের এই নীতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। তিনি লেখেন, ‘আমরা এখনও তটস্থ হয়ে আছি। এইজন্য নয়কি যে আমাদের প্ল্যান হয়নি, এইজন্য নয়কি আমাদের টাকা নষ্ট হয়েছে। বরং এইজন্য যে হঠাৎই উপলব্ধি করলাম আমরা স্বাধীন নই। কেন আগে থেকে কোনো সতর্ক ছাড়াই কোনো পরিবারের ছুটির প্ল্যান এইভাবে নষ্ট করা হল? কারণ, তুমি তোমার সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছ। কেন? এই ঘটনাই মিডিয়ায় থাকা সমস্ত মানুষকে শিক্ষা দিয়ে যাবে।’
আমরা কি সত্যিই স্বাধীন? যা নিয়ে প্রণয় কন্যা লিখেছেন, ‘এই ঘটনার পরও আমার বাবা-মা আতঙ্কগ্রস্ত হয়নি তা থেকে আমি অনুপ্রাণিত। তাঁরা এখনও রাস্তা খুঁজছেন এবং গণতন্ত্রকে আলোকিত করার এবং দেশের স্বাধীনতা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। যদি আপনি এই সরকারকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছন এবং ভাবছেন যে আপনি সুরক্ষিত, তাহলে আপনি অন্ধ। মোদী-শাহের ভারতে কেউ সুরক্ষিত নয়। এটি পুরো একনায়কতন্ত্র চলছে দেশে।’
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে প্রণয় রায়ের এক বন্ধু বলেছেন, ‘ এটা খুবই ভয়ানক অভিজ্ঞতা। এমনকি এই ঘটনার সময় তাঁদের নাতনি তাঁদের সঙ্গে ছিল এবং সে পুরো ঘটনাটি চোখের সামনে থেকে দেখেছে। যা সত্যিই মর্মান্তিক।’ স্বাধীন ভারতের স্বাধীন নাগরিকদের এই ঘটনা, স্বাধীনতা নিয়ে এক প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করাল।