গত লোকসভা অধিবেশনে একের পর এক বিল এনে পাশ করিয়ে নিয়েছে বিজেপি সরকার। সেইভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা না থাকায় কোনো হাউসেই আটকায় নি বিলগুলো। তবে রাজ্যসভায় পর্যাপ্ত সংখ্যা না থাকা সত্ত্বেও বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে তিন তালাক বিল আর কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ও রাজ্য পুনর্গঠন বিল দু’টি পাশ করিয়ে নিয়েছে মোদী সরকার। এ বার ধর্মকে হাতিয়ার করে আরও এক বিল আনার তোড়জোড় করছে কেন্দ্রীয় সরকার এমনই জানা যাচ্ছে। এইবার তাঁদের পাখির চোখ ধর্মান্তরকরণ বিরোধী আইন। সঙ্ঘ পরিবারের দাবি মেনে যে এই বিল প্রস্তাবনা করা হচ্ছে সে কথাও শোনা যাচ্ছে বিজেপির অন্দরে।
প্রসঙ্গত, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি আনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সরকারের শীর্ষ সূত্র আজ বলেছে, এখনও জোর করে, প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরণ ঘটে চলেছে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় যার সংখ্যা খুব বেশি। বিজেপির নেতাদের একাংশের দাবি, ভালবাসার নামেও পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু মেয়েদের ধর্ম পরিবর্তন করা হচ্ছে। সেটাকেই ‘লাভ জেহাদ’ বলছেন তাঁরা। যদিও বিরোধীদের দাবি, এক জন প্রাপ্তবয়স্ক কোন ধর্মে বিয়ে করবেন বা কোন ধর্ম গ্রহণ করবেন, সেটা তাঁর মৌলিক অধিকার। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিলটি না আসা পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে বোঝাই যাচ্ছে নির্দিষ্ট একটি ভোটব্যাঙ্ককে বার্তা দেওয়াই লক্ষ্য।’’
বিজেপির দাবি, স্বাধীনতার সময়ে দেশে ৯০ শতাংশ হিন্দু ছিল। এখন তা ৭২-৭৩ শতাংশ। যদিও জনগণনার নথি বলছে ১৯৫১ সালে এ দেশে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৮৪ শতাংশ। ২০১১ সালে তা কমে হয়েছে ৭৯.৮০ শতাংশ। পরিবার পরিকল্পনাই যার মূল কারণ বলে মনে করেন বিরোধীরা। বিজেপির অবশ্য বক্তব্য, ধর্ম পরিবর্তনও সমান ভাবে দায়ী। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, যখন কোনও হিন্দু অন্য ধর্ম গ্রহণ করছেন, তাকে বলা হচ্ছে ধর্মান্তরণ। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবার যখন কাউকে হিন্দুধর্মের ছাতায় নিয়ে আসছে, তখন তা ঘর ওয়াপসি! এ বার ধর্মান্তরণ পাকাপাকি রুখতেই বিল আনার কথা ভাবনা। অখিল ভারতীয় সন্ত সমিতির কর্তা স্বামী জিতেন্দ্রানন্দ সরস্বতী বলেন, ‘‘আমরা চাই সরকার দ্রুত আইন করুক। হিন্দু সমাজের স্বার্থেই তা প্রয়োজন।’’ কিন্তু বিরোধীরা এই বিলকে সঙ্ঘের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে দাবি করছেন। এই বিল নিয়ে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন তোলপাড় হতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের।