দেশের একপ্রান্তে বৃষ্টি নেই। হাহাকার শুরু করেছে সেই অঞ্চলের মানুষ। আর অপরপ্রান্তে প্রবল বৃষ্টির তোড়ে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। ভেসে গেছে রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ঘরবাড়ি। আর এই বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ আরও খারাপ হয়ে উঠছে দক্ষিণ-পশ্চিমের তিন রাজ্যে। গত কয়েকদিনে মহারাষ্ট্র, কেরল ও কর্ণাটকে মারা গিয়েছেন কয়েক শো মানুষ। মহারাষ্ট্রের কোলাপুর, সাতারা ও সাঙ্গলি সহ পাঁচ জেলায় দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও অন্যান্য যে রাজ্যগুলি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার মধ্যে আছে মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত ও ওড়িশা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, এনডিআরএফ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বায়ুসেনার ২৫০ টি রেসকিউ টিমকে পাঠানো হয়েছে মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্ণাটকে।
কর্ণাটকে প্রবল বৃষ্টিতে কয়েক লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেরল সরকার শনিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় জারি করেছে রেড অ্যালার্ট। মহারাষ্ট্রে গত কয়েকদিনে প্রবল বৃষ্টিপাতে মারা গিয়েছেন ২৮ জন। কয়েকটি জেলা বন্যায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আকাশপথেও চলছে নজরদারি। হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কোলাপুর ও সাঙ্গলিতে বড় বড় বিল্ডিং, ফ্লাইওভার পর্যন্ত ডুবে রয়েছে। মুম্বইয়ের সঙ্গে বেঙ্গালুরুকে যোগ করেছে যে রাস্তাটি, সেই ২৪ নম্বর জাতীয় সড়কও চারদিন ধরে রয়েছে জলের তলায়। কৃষ্ণা ও পঞ্চগঙ্গা সহ মহারাষ্ট্রের প্রতিটি বড় নদী বইছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে।
২০১৮ সালেই ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর বন্যার মুখে পড়েছিল কেরল। এবারও ওই রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চল জলের তলায় চলে গিয়েছে। সেখানে গত তিন দিনে ৪৮ জন মারা গিয়েছেন। এক লক্ষেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন রিলিফ ক্যাম্পে। গত রবিবার থেকে কোচি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিমান ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। কেরলের ওয়ানাড ও মালাপ্পুরম অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ধস নামার খবর পাওয়া গিয়েছে। মাল্লাপুরমে ধসে ৪০ জন আটকে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওয়ানাডের এম পি রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন, দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, ১৫ আগস্ট নাগাদ সেখানে আরও একদফা ভারী বৃষ্টি হবে। কর্ণাটকের উত্তরে বেলাগাভি, চিকমাগালুর ও শিবমোগগায় দু’লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা আকাশপথে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া মোদীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন, এই বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা হোক।