বাংলা থেকে এক কোটি সদস্য করতে হবে। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে এই টার্গেটই বেঁধে দিয়েছে দিল্লীর নেতারা। বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে অনলাইন, অফলাইন এবং মিসড কল— সব ধরনের পদ্ধতির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। দিল্লীর নির্দেশ মিলতেই কোমড় বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছিলেন রাজ্যের পদ্মনেতারা। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের খাতায় বঙ্গ বিজেপির সদস্য সংখ্যা এখনও আটকে আছে ৩০ লাখেই! কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের খাতায় সেই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে হয়ে গিয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৬০ লাখ! যা নিয়ে রসিকতার অন্ত নেই রাজনৈতিক শিবিরে।
প্রসঙ্গত, গত মাসের গোড়ায় দেশজুড়ে সদস্যপদ সংগ্রহ অভিযানে নেমেছে বিজেপি। এ রাজ্যের ১ কোটি বাসিন্দাকে সদস্য করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সপ্তাহখানেক আগে রাজ্য বিজেপি নেতারা সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেছিলেন, তাঁদের সদস্যসংখ্যা ৫০ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে সর্বভারতীয় বিজেপির তরফে গোটা দেশে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের ভারপ্রাপ্ত নেতা শিবরাজ সিং চৌহান গত ৩১ জুলাই কলকাতায় এসে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, এ রাজ্যে নতুন সদস্য হয়েছে ৩৮ লাখ।
আবার তার আট দিন পরে বৃহস্পতিবার বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষও রাজ্য বিজেপির সেই দাবিকে কার্যত খণ্ডন করেছে। উল্টে ৩০ লাখ সদস্য করার জন্য টুইট করে বঙ্গ বিজেপিকে অভিনন্দন জানিয়েছে তিনি। টুইটে লিখেছেন, ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযানের আরও ১৩ দিন বাকি আছে। এর মধ্যেই বঙ্গ বিজেপি ৩০ লক্ষ সদস্য করে ফেলেছে।’ কিন্তু তারপরও রাজ্য বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের ভারপ্রাপ্ত নেতা রথীন্দ্রনাথ বসু এবং তুষারকান্তি ঘোষ দাবি করছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই প্রায় ৬০ লাখ সদস্য সংগ্রহ করে ফেলেছেন।
একই দলের তিন জায়গা থেকে সংগৃহীত সদস্যের তিন রকম সংখ্যা আসায় ফাঁপরে পড়েছেন দলের কর্মীরা। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি রসিকতা করে প্রশ্ন তুলছে, কোনটা আসল? শুক্রবার এ প্রসঙ্গে তুষারকান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, শেষ পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে বিজেপির সদস্য সংখ্যা ৬০ লক্ষের কাছাকাছি। তাঁর দাবি, ৫৫ লক্ষের কম কোনও ভাবেই নয়। তবে সন্তোষের টুইটের কথা জানার পর তুষারের যুক্তি, ‘উনি শুধু অনলাইন সদস্যের বিষয়ে বলতে চেয়েছেন। তবে সেটাই সব নয়। আমরা বাড়ি বাড়ি ফর্ম নিয়ে গিয়েও লোকজনকে সদস্য করেছি। সেই হিসাবটা এখনও তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি।’ তবে রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে, শুধু অনলাইন সদস্যদের কথা বলতে চাইলে সেটা টুইটে উল্লেখ করতেন সন্তোষ।
এ নিয়ে রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘যতদূর জানি, গোটা বিষয়টি দিল্লী থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। কতজন ফর্ম ফিল-আপ করিয়ে সদস্য হয়েছেন আর কতজন অনলাইনে হয়েছেন, সেই তথ্য বি এল সন্তোষের মতো নেতাদের জানা নেই, সেটা হতে পারে না। তাই উনি সদস্য সংখ্যা কমিয়ে টুইট করেছেন, এটা ভাবা ঠিক হবে না।’ অন্যদিকে, কোন রাজ্য থেকে কত জন বিজেপির সদস্য হচ্ছেন, সে দিকে কড়া নজর রেখেছেন বিজেপির সর্বভারতীয়স্তরের সাংগঠনিক নেতারা। ফলে দিল্লীর বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য ছুঁতে না পারলে যে রাজ্য বিজেপি নেতাদের যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রোষের মুখে পড়তে হবে, তা বলাই বাহুল্য। সে কারণেই রাজ্যের পদ্মনেতারা সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে।