বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ঠিক তেমনই চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুয়ের মিলনের ফলে একদিকে যেমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে, তেমনি এই অবস্থায় কার্যত তলানিতে পৌঁছেছে পরিকাঠামো বৃদ্ধিও। সবমিলিয়ে অর্থনীতির আকাশে যে আশঙ্কার মেঘ জমছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সরকারি পরিসংখ্যানেই। তাই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুজ্জীবিত করতে এবং নতুন বিনিয়োগ টানতে কেন্দ্রের কাছে ১ লক্ষ কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্যাকেজের আবেদন জানিয়েছে বাণিজ্যমহল।
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন ভারতের শিল্প সংস্থার শীর্ষ কর্তারা। বৈঠকের পর বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের প্রেসিডেন্ট বি কে গোয়েঙ্কা বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে কেন্দ্রের সহায়তা প্রয়োজন। আমরা ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি প্যাকেজের সুপারিশ করেছি।’ জেএসডব্লিউ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দল বলেন, ‘ইস্পাত, নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্স কোম্পানি এবং অটোমোবাইল ক্ষেত্র বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। মন্ত্রী শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’
পিরামল এন্টারপ্রাইজেস-এর চেয়ারম্যান অজয় পিরামলের সংযোজন, ‘ব্যাঙ্কগুলির ঋণ দিতে অনীহা সমেত একাধিক বিষয় মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘ব্যাঙ্কগুলির কাছে নগদের জোগান নেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দিতে চাইছে না। এনবিএফসি ক্ষেত্রের অবস্থা দেখলেই বোঝা যাবে অর্থনীতির উপর কী ধরনের চাপ পড়ছে। এনবিএফসিগুলির নগদের জোগান কমে যাওয়ার ফলে গাড়ি ও বাড়ির ঋণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলি সব থেকে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দূর করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। কাজেই এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
আবার বণিকসভা ফিকির প্রেসিডেন্ট সন্দীপ সোমানি বলেন, ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমানোর পর বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকেও তার সুফল গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যাঙ্কগুলিকে গ্রাহক এবং ঋণগ্রহীতাদের সুদের হার কমানোর সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে।’ আর এক বণিকসভা কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট টি ভি নরেন্দ্রন বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি ত্বরাণ্বিত করতে আর কী করা দরকার তা জানতে চেয়েছে কেন্দ্র। আমরা মূল বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে, গাড়ি শিল্পে মন্দার ফলে ইস্পাত শিল্প মার খাবে।’ সবকটি বণিকসভাই এখন চোখ রাখছে, সমস্যা সমাধানে মোদী সরকার কী পদক্ষেপ করে, সেই দিকে।