মমতার সরকার রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আদিবাসী উন্নয়ন দফতর গঠন করেছে। এই দফতরের কিছু উদ্যোগ দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা
আদিবাসীদের মধ্যে অ্যানিমিয়া আক্রান্ত রোগীদের ওপর নজর রাখার জন্যে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ২০১৪-১৫ সালে। ৪ লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করতে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মহামারি সংক্রান্ত বিদ্যা পড়ানো হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও ইন্সটিটিউট অফ হেমাটোলজির সহায়তায়। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যোগ রেখে আইসিডিএস কেন্দ্র নির্মাণে জোর দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরে ১,১২৩টি কেন্দ্র নির্মাণে ৫৭.১২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
উন্নয়ন/সাংস্কৃতিক বোর্ড এবং উপদেষ্টা পর্ষদ
ছয়টি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন/সাংস্কৃতিক পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। এই পর্ষদগুলি হল – মায়েল ল্যাং লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ, তামাং উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদ, শেরপা সাংস্কৃতিক পর্ষদ, ভুটিয়া উন্নয়ন পর্ষদ, লিম্বু উন্নয়ন পর্ষদ এবং আদিবাসী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদ।
যেহেতু বাংলা পঞ্চম শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত রাজ্য নয়, আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদকে পুনর্গঠন করা হয়েছে তাদের উন্নয়নের জন্য। পুনর্গঠন হওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয়টি বৈঠক করেছে এই পর্ষদ এবং সেইমত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
গত তিন বছরে আনুমানিক ৩৪৮.৩২ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে এই পর্ষদগুলির উন্নয়নের জন্য। করা হয়েছে নানা উন্নয়নমূলক কাজ, যেমন, ৮৯০০টি পরিবেশবান্ধব গৃহ নির্মাণ, ৩৯৮৭টি শৌচালয় নির্মাণ, পানীয় জলের জন্য ৩৮টি ঝোরার উন্নয়ন, ৮০,০০০ বৃক্ষ রোপণ, ১০০০টি জনমুখী প্রকল্প ইত্যাদি।
বার্ধক্য-ভাতা ও সামাজিক সুরক্ষা
তপশিলি উপজাতির মধ্যে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা ষাট বা ষাটোর্ধ প্রবীণদের প্রতি মাসে ১০০০ টাকা দেওয়া হয়। গত সাত বছরে ২১,০০০ এরও বেশী নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এখন এই ভাতা পান ১.৫ লক্ষ মানুষ।
২০১৪-১৫ সালে কেন্দু পাতা সংগ্রহকারীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে গত তিন বছরে ৩৪,৭৪৩ জন পাতা সংগ্রহকারীকে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৪৭ জনকে ২.২৬ কোটি টাকার সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
জঙ্গলের অধিকার
৩২৩টি থানের বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ, এছাড়া, জহর থানের কমিউনিটি পাট্টা প্রদান করা হয়েছে।
দি ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট (২০০৬) টি সাঁওতালি ও কুরুখ ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এবং এই ভাষাভাষীর সকল মানুষকে তা বিতরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় ভাষার প্রচার
সাঁওতালি ভাষার প্রচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি আকাদেমির তরফ থেকে ত্রৈভাষিক (সাঁওতালি-ইংরাজি-বাংলা) সাঁওতালি অভিধান প্রকাশ করা হয়েছে।
আদিবাসীদের জন্য চলতে থাকা প্রকল্পগুলির খবরাখবর দিতে বাংলা, হিন্দী ও সাঁওতালি ভাষায় একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। কুরুখ ভাষায় ল্যাঙ্গুয়েজে প্রাইমার তৈরী করা হয়েছে (টলং সিকি হরফে কুরুখ ভাষা লেখা হয়) সাংস্কৃতিক গবেষণা কেন্দ্র থেকে। ওঁরাও সম্প্রদায়ের মানুষ কুরুখ ভাষায় কথা বলেন (জনসংখ্যা ৬,৪৩,৫১০) এবং এই ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে।