আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ভারত অভিযানে এসেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে। সিন্ধু নদ অতিক্রম করে গ্রীক বীরের গন্তব্য ছিল গান্ধারের তক্ষশীলা। পথে ঝিলম আর চন্দ্রভাগা নদীর মাঝে হিদাসপিসের যুদ্ধে আলেকজান্ডার-পুরু বৃত্তান্ত বহুচর্চিত ও বহু আলোচিত৷ কিন্তু তা সত্বেও সম্পূর্ণ ভারত বিজয়ের স্বপ্ন অধরা রেখে ফিরে যেতে হয় আলেকজান্ডারকে। কারণ দীর্ঘ অভিযানে তিনি নিজে ও তাঁর সেনাবাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
তবে আলেকজান্ডার ফিরে যাওয়ার আগে তিনি কয়েকজন সেনাপতি-সহ সৈন্য রেখে যান ভারতবর্ষে। তাঁদের বংশধররা নাকি এখনও আছেন লাদাখের কয়েকটি গ্রামে। লে এবং কার্গিলের ধা, হানু, ভীমা, দারচিক আর গারকোন গ্রামে বাস ব্রোকপা বা দার্দ উপজাতির। তাঁদের দাবি, তাঁরা আলেকজান্ডারের সেনাদের বংশধর। এই উপজাতির শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ইউরোপীয় জনজাতির দৈহিক বৈশিষ্ট্যের বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। নিজেদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন ব্রোকপারা। পাশাপাশি পাহাড়িয়া প্রকৃতি তাদের প্রিয়, ভুস্বর্গকে তাই ভালোবেসে আগলে, সাজিয়ে, ভালো রাখতে চায় তারা।
ব্রোকপা জনজাতিতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল বিয়ে। কারণ, তাঁরা নিজেদের কমিউনিটির বাইরে গিয়ে বিয়ে করেন না। তাঁরা এ ভাবেই রক্ষা করেন রক্তের ‘বিশুদ্ধতা’। বিশ্বাস এই উপজাতির। কারণ তাঁদের বিশ্বাস, তাঁরা নাকি খাঁটি ‘আর্য’। তাঁদের নতুন প্রজন্ম আধুনিকতার স্রোতে সামিল হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। কিন্তু তবুও এই জনগোষ্ঠী আন্তরিক চেষ্টা করে চলেছে, নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে।
তবে আধুনিক গবেষণা বলছে, আজকের দিনে বিশুদ্ধ জনজাতি বা ট্রু রেস বলে কার্যত কিছু হয় না। কিন্তু বিশ্বাসে ভর করে থাকে মানুষ। তাই তর্কে যা না মেলে, তা মেলে বিশ্বাসে। আর ব্রোকপারা এভাবেই ভালো থাকেন। নিজেদের বিশ্বাসেই বুঁদ থাকেন।
কার্গিল থেকে ১৩০ কিমি উত্তর পূর্বে নিয়্ন্ত্রণরেখা-র কাছেই ব্রোকপাদের গ্রামগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিন্ধুনদের উত্তর তীরে, বাল্টিস্তান যাওয়ার পথে। কিছু ব্রোকপা মানুষের থাকেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরেও। কয়েক বছর আগে অবধি নিজেদের গ্রামে বহিরাগতদের পা রাখা পছন্দ করত না এই জনজাতি। ধীরে ধীরে হলেও সেই রীতি পাল্টাচ্ছে। মূলত বিদেশি পর্যটকরা বেশি এলেও ইদানীং কাশ্মীর পর্যটনের অংশ হচ্ছে ব্রোকপাদের গ্রাম। বাইরের দুনিয়ায় প্রকাশ হচ্ছে তাঁদের রীতি রেওয়াজ।