দিন দুয়েক আগেই দ্য হিন্দু সূত্রে জানা গিয়েছিল, আসামের কামরূপ এলাকায় বোকো নামে একটি গ্রামের প্রায় ৩০০ বাসিন্দাকে নাগরিকত্ব প্রমাণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই প্রমাণপত্র নিয়ে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বোকোর বাসিন্দাদের যেতে হবে আসামের ওপরের দিকের এলাকায়। ৫০০ কিমি পথ পার করতে হবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। না হলে হয়ত দেশে থাকার অধিকারটাই চলে যাবে। এনআরসির নামে এমনই প্রহসন চলছে গোটা আসাম জুড়ে। রাত থেকে শিবসাগরে এনআরসি কেন্দ্রের সামনে রাস্তায় বসা মানুষের দল। কারও কোলে নবজাতক। কারও হাতে হাত ছোট ছেলেমেয়েদের। গরম, তেষ্টা, খিদেয় কাঁদছে তারা। অসুস্থ হয়ে রাস্তায় শুয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। পানীয় জলের তীব্র অভাব।
একই ছবি যোরহাট, লখিমপুরের বিভিন্ন এনআরসি কেন্দ্রে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, রাজনৈতিক দলের কর্মীরা যেমন পেরেছেন জল, বিস্কুটের ব্যবস্থা করেছেন। বেলা গড়িয়েছে। খুলেছে এনআরসি কেন্দ্রের দরজা। ধুঁকতে থাকা মানুষগুলো আবারও এক বার তাঁদের ঝুলি খুলে একে একে মেলে ধরেছেন নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র। নামনি অসমের ওই মানুষগুলোর কেউ ছাগল বিক্রি করে, কেউ গয়না বেচে বা বন্ধক দিয়ে উজানি জেলায় পাড়ি দিয়েছেন। অনেকে গ্রামের বাইরে পা দেননি কখনও। কিন্তু এক রাতের ধাক্কায় তাঁদের ৬০০-৭০০ কিলোমিটার টেনে এনেছে এনআরসি দফতরের ফতোয়া। তবে তাঁদের সাহায্য এগিয়ে এসেছেন কবি, মানবাধিকার কর্মী, গবেষক, ছাত্ররা।
তাঁরা সবাই মিলে বিভিন্ন জেলায় নিজেদের মতো করেই হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছেন। জানিয়েছেন, প্রয়োজনে খাবার, থাকার জায়গা, গাড়ি ভাড়া, ওষুধপত্রের ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন। অন্যদিকে, ক্ষিপ্ত, শ্রান্ত সংখ্যালঘু গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, যদি ৩১ জুলাই এনআরসি প্রকাশ হয়ে যেত তা হলে তো তাঁদের নাম এনআরসিতে আসতই। কারণ সকলেই খসড়া তালিকায় ছিলেন।