পুলওয়ামা কাণ্ডের পর পর্যটকেরা কাশ্মীর নিয়ে খানিকটা দোলাচলে পড়েছিলেন। অশান্তির আশঙ্কায় প্যাকেজ ট্যুর নিয়ে সেই সময় অনেক ব্যবসায়ীই ঘোর সমস্যায় পড়েছিলেন। পিছিয়েছিলেন টুরিস্টরাও। তবে আশা ছিল, পুজোর আগে সমস্যা মিটবে। সেই মতো পুজোর আশপাশে কাশ্মীর প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল প্রায় সব ট্যুর অপারেটর সংস্থাই। কিন্তু এখন সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একের পর এক বাতিল হয়ে যাচ্ছে প্যাকেজ। একদিকে ব্যবসায় ক্ষতি, অন্যদিকে পর্যটকরা অগ্রিম টাকা ফেরত চাওয়ায় আরও ফাঁপরে সংস্থাগুলি। এদিকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সে রাজ্যের পর্যটন দফতর। কলকাতায় তাদের যে অফিস আছে, পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত সেখানকার কর্তারা।
ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন বসু বলেন, “আমরা চাইছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাশ্মীরে স্বাভাবিকত্ব ফিরে আসুক। কারণ, কাশ্মীরীদের মুখেই যদি হাসি না থাকে, তাহলে তাঁরা ট্যুরিস্টদের স্বাভাবিক ও আন্তরিক পরিষেবা দেবেন কী করে? পুজোয় যে কোনও ট্যুর অপারেটরের ন্যূনতম একটা কাশ্মীর প্যাকেজ থাকেই। পুজো যেহেতু সামনে, তাই বেশিরভাগেরই বুকিং হয়ে গিয়েছে। অপারেটররা বুকিংয়ে যে টাকা অগ্রিম নিয়েছেন পর্যটকদের থেকে, তার একটা বড় অংশ হোটেলে এবং গাড়ি সংস্থাগুলিকে অগ্রিম বাবদ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। যাঁরা প্যাকেজ বুকিং করেছিলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি জটিল হতেই তাঁরা অপারেটরদের থেকে টাকা ফেরত চাইছেন”।
সেটাই তাঁদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। কিন্তু ট্যুর সংস্থাগুলির টাকা কাশ্মীরে ‘ব্লক’ হয়ে যাওয়ায়, তাঁরা বেজায় সমস্যায় পড়েছেন। ট্যুর নিয়ে কোনও গ্যারান্টিও দিতে পারছে না কেউ। ফলে অপারেটরদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। অথচ এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে কোনওভাবেই অপারেটররা দায়ী নয়। তাই পরিস্থিতি যত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়, ততই ভালো।
কলকাতা থেকে কাশ্মীর পর্যটন দফতরের যে অফিস চলে, সেখানকার অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্যুর অপারেট আসান উল হকের কথায়, আমরা সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করতে পারি না। সেখানে কী পরিস্থিতি, তারও আঁচ করতে পারছি না আমরা। কোনওভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না ডিরেক্টরেটের সঙ্গে। এরাজ্য থেকেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক যান কাশ্মীরে। এবারও বাংলা থেকে ভালো ব্যবসা হবে, এমন আশা ছিল। কিন্তু এখন কী হবে, তা নিয়ে ধন্দে সবাই”।
পরিস্থিতি যে মোটেই ভালো নয়, তা টের পাচ্ছেন ট্যুর অপারেটররা। কুণ্ডু স্পেশালের কর্ণধার সৌমিত্র কুণ্ডু বলেন, কাশ্মীরে বারবার সমস্যা তৈরি হওয়ায় আমরা দীর্ঘদিন সেখানে ট্যুর বন্ধ রেখেছি। তবু জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হিসেবে ঘোষণার আগে আমরা কাশ্মীরের পর্যটন সংস্থাগুলির থেকে খোঁজখবর নিয়েছিলাম সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে। অবস্থা যে ভালো নয়, তার আঁচ পেয়েছিলাম।