অবশেষে আঁচ পাওয়া গেল শ্রীনগরের বর্তমান পরিস্থিতির। ৩৭০ ধারা রদ করায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে উপত্যকায়। বিক্ষিপ্তভাবে হলেও পরিস্থিতিটা তেমনই। বুধবার দেখা গেল ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই শ্রীনগরের রাস্তায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিক। সেই বিক্ষোভকে ঘিরেই সংঘর্ষ। ঘটল প্রাণহানির ঘটনাও। গুলিবিদ্ধ এবং আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেকে। গ্রেফতারও হয়েছেন শতাধিকের বেশি বিক্ষোভকারী। তবে এটা শুধুই শ্রীনগরের চিত্র। উপত্যকার বাকি অংশের ছবিটা ঠিক কেমন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ভূস্বর্গে এখনও বন্ধ ল্যান্ডলাইন, মোবাইল, ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড, কেবল পরিষেবা। সেগুলি চালু হলে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আরও বাড়বে, তেমনটাই আশঙ্কা করছে পুলিশ-প্রশাসন।
মঙ্গলবারই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কেন্দ্রকে পাঠানো রিপোর্টে জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদকে স্বাগত জানিয়েছেন কাশ্মীরবাসী। তখনই অনেকে আঁচ করেছিলেন, এই শান্তি চিরস্থায়ী না-ও হতে পারে। সেটারই আঁচ পাওয়া গেল এ দিন। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই এ দিন দফায় দফায় বিক্ষোভ-মিছিল হয়েছে শ্রীনগরে। পুলিশ সূত্রে খবর, একটি দলের সঙ্গে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। তার মধ্যেই এক জনকে তাড়া করে পুলিশ। সেই তাড়া খেয়েই ঝিলম নদীতে ঝাঁপ দেন ওই যুবক। পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই সংঘর্ষে পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে।
এই ঘটনায় অন্তত ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা এই গ্রেফতারির খবর স্বীকারও করে নিয়েছেন। তবে ধৃতদের মধ্যে হেভিওয়েট কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী আছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি ওই পুলিশকর্তা।
অন্য দিকে প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফয়সল কাশ্মীরের সামগ্রিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখছেন, ‘‘শ্রীনগরে জিরো ব্রিজ থেকে বিমানবন্দর, সব জায়গায় কার্যত কার্ফুর চেহারা নিয়েছে। রোগী এবং কার্ফু পাসধারী ছাড়া কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে নিরাপত্তার ভার তুলে নিয়েছে সেনা। শ্রীনগরের বাইরে অন্য জেলাগুলিতে ১৪৪ ধারা আরও কঠোর। রাজ্যের ৮০ লক্ষ মানুষ এই রকম পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেনি।’’
উপত্যকার সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও কোনও না কোনও ভাবে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মত তুলে ধরতে পারছেন। যেমন এর আগে ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতিও এই যোগাযোগহীন অবস্থায় টুইট করেছেন। তেমন ভাবেই ফেসবুকে লিখেছেন ফয়সলও। তবে এত কড়াকড়ির মধ্যেও বুধবার থেকে কিছুটা হলেও ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে শ্রীনগর। অনেককেই রাস্তায় বেরোতে দেখা গিয়েছে। যদিও সেই সংখ্যাটা খুবই কম। কিছু দোকানপাটও খুলেছে শ্রীনগরে। তবে যোগাযোগের প্রায় সব মাধ্যম বন্ধ থাকায় রাজ্যের বাকি অংশের খবর খুব বেশি পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যেই বুধবারও শ্রীনগর জম্মু-কাশ্মীর সচিবালয়ে জাতীয় পতাকা এবং কাশ্মীরের পতাকা পাশাপাশি উড়তে দেখা যায়। এত দিন পর্যন্ত ভারতের ত্রিবর্ণ পতাকা ছাড়াও জম্মু-কাশ্মীরের জন্য আলাদা পতাকা ছিল। কিন্তু ৩৭০ ধারা রদের পর থেকে ভুস্বর্গের জন্য আলাদা আর কোনও পতাকা থাকার কথা নয়। সব মিলিয়ে এখনও থমথমে গোটা উপত্যকা। নিরপত্তার চাদরে মুড়ে কার্যত দুর্ভেদ্য দুর্গ করে তোলা হয়েছে। এই পরিস্থিতি আরও কত দিন চলবে, এবং কবে স্বাবাভিক পরিষেবা চালু হবে, আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কাশ্মীরবাসী।