গত সোমবার বিল পাশের পর ৩৭০ ধারা রদ করেছে মোদী সরকার। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ৪৮ ঘন্টা। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। মোদী অ্যান্ড কোম্পানীর এই স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে একে একে মুখ খুলেছে প্রায় সবকটি বিরোধী দলই। সকলেরই এক প্রশ্ন, কেমন আছে ভূস্বর্গ? শ্রীনগরের ডিএসপি যদিও বলেছেন, ‘অবস্থা একেবারে শান্তিপূর্ণ।’ তবে এবার কাশ্মীরের ‘আসল অবস্থা’ তুলে ধরতে গিয়ে ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রবীণ সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা তাঁর শ্রীনগরের বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে গিয়ে কার্যত ফেটে পড়েন। বলেন, আমি দরজা ভেঙে আপনাদের সামনে এলাম। গণতান্ত্রিক নয়, স্বৈরাচারী পদক্ষেপ। এই ভারতকে আমি চিনি না।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘ফারুক আবদুল্লাকে গৃহবন্দী বা গ্রেফতার কিছুই করা হয়নি। তিনি মুক্তই আছেন।’ শাহ এ-ও বলেন, ‘উনি নিজের ইচ্ছাতেই সংসদে আসেননি। ওঁকে কেউ বন্দী করে রাখেনি।’ এর প্রতিবাদেই বাড়ির বাইরে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফারুখ বলেন, ‘আমি দরজা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাধ্য হলাম বেরোতে, কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিথ্যে কথা বলছেন। আপনারা দেখুন, আমি তো সত্যিই গৃহবন্দী। কোথাও যেতে দেওয়া হচ্ছে না আমাকে। দেখছেন তো আমার বাড়ির বাইরে ডিএসপি বসে আছেন।’ তিনি এ-ও জানান, ‘আমার ছেলে (ওমর আবদুল্লা) জেলে আছে। জানি না আরও কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারও কোথাও যাতায়াতের অনুমতি নেই। আমরা সবাই গৃহবন্দী।’
এর পাশাপাশি শাহকেও বিঁধতে ছাড়েননি ফারুক। তিনি সাফ বলেন, ‘জানি না কীভাবে এমন মিথ্যে বলতে পারলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’ সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, ‘আমি আমার রাজ্যের মানুষ এবং সমস্ত ভারতবাসীর কাছে একটি বার্তা দিতে চাই। সুখে-দুঃখে আমরা আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আশা করব আপনারাও আমাদের সঙ্গে থাকবেন। প্রার্থনা করি, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরে আসুক দেশে।’ উল্লেখ্য, রবিবার মধ্যরাত থেকে গৃহবন্দী থাকার পর সোমবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে। কারণ হিসেবে দেখান হয়েছে, এঁরা উভয়েই নাকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাধা হতে পারেন।
শুধু তাই নয়, ৩৭০ ধারা ওঠার আগে থেকেই মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা অনেকাংশেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দয়া করে মোদী সরকারের ফাঁদে পা দেবেন না। ৩৭০ ধারার বিরোধীতা, জম্মু-কাশ্মীর ভাগ নিয়ে কোনও প্রতিবেদন বা সম্প্রচারই হচ্ছে না। ২২টি জেলার অন্তত ২০টিতে কার্ফু বা কার্ফুর মতো অবস্থা চলছে। টেলিকম বা ইন্টারনেট কোনও পরিষেবাই নেই। এমনকী টিভিও দেখা যাচ্ছে না।’