গত সোমবারই বাতিল হয়েছে ৩৭০ ধারা। মোদী সরকারের এই স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই গোটা দেশে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। তবে এর পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠছে যে ৩৭০-এর পর কি এবার ৩৭১-এর পালা? বিরোধীদের পাশাপাশি এমনই আশঙ্কা বিজেপির জোট শরিক ত্রিপুরার আইপিএফটি-রও। সোমবারই আইপিএফটি সভাপতি তথা বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের রাজস্বমন্ত্রী এনসি দেববর্মা দাবি তুলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখুক কেন্দ্র। তাঁর দল চিঠিও দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।
আইপিএফটি-র সাধারণ সম্পাদক তথা ত্রিপুরার মন্ত্রী মেবারকুমার জমাতিয়া অবশ্য কাশ্মীর ভাগে খুব খুশি। তাঁর আশা, এবার মিলবে তাঁদের সাধের তুইপ্রাল্যান্ড। শুধু তুইপ্রাল্যান্ড কেন, নতুন দুটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য ঘোষিত হতেই ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ নিউ স্টেটস দাবি তুলেছে, গোর্খাল্যান্ড, বোড়োল্যান্ড, কুকিল্যান্ড, বুন্দেলখণ্ড, পূর্বাঞ্চল, বিদর্ভ, স্বশাসিত কার্বি আংলং প্রভৃতি পৃথক রাজ্যের দাবিকে ফের সামনে নিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যেই বোড়োল্যান্ডে পৃথক রাজ্যের দাবিতে শুরু হয়েছে ফের আন্দোলন।
জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারার মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির পাশাপাশি ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ৩৭১ ধারা চালু রয়েছে। এক দেশ, এক আইনের প্রবক্তারা এবার কি সেই সুবিধেও বিলোপ করতে চলেছেন? এই আশঙ্কা থেকেই প্রাক্তন আমলা তথা ত্রিপুরার মন্ত্রী এনসি দেববর্মা সোমবার জানিয়েছেন, তাঁরা জোটের শরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে কাশ্মীরে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার অনুরোধ জানাবেন। ত্রিপুরায় সিপিএমের উপজাতি সংগঠন গণমুক্তি পরিষদের নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ জিতেন চৌধুরিরও আশঙ্কা, উত্তর-পূর্ব ভারতে ফের অশান্তি ডেকে আনবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত।
রাজ্যসভাতে সোমবারই উঠেছিল পৃথক বোড়োল্যান্ডের দাবি। মঙ্গলবার দাবি উঠেছিল, গোর্খাল্যান্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যকে টুকরো করার দাবি। আসামের বোড়ো এলাকায় বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে নিজেদের দাবি আদায়ে। ত্রিপুরায় তুইপ্রাল্যান্ডের দাবি উঠে এসেছে ফের সামনের সারিতে। আসামের ভারতীয় গোর্খা পরিসঙ্ঘ সোচ্চার পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে। এই সকল কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ফের অশান্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তাঁর মতে, গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল-সহ ভারতেই নেমে আসছে অন্ধকার দিন। ৩৭০ ধারা বিলোপকে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।
আসামের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়াও কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করে ৩৭১ ধারা বিলোপের মতো ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্ত না নেওয়ার দাবি তুলেছেন। কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারির মতে, সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষকে ভুল বার্তা দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, ৩৭১-এর এ থেকে জে অবধি বিভিন্ন ধারা বলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিকিম, অসম, নাগাল্যান্ড থেকে শুরু করে দক্ষিণের অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া এমনকী, গুজরাতও বিশেষ সুবিধা ভোগ করছে। মূলত স্থানীয় জনজাতিদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে এই বিশেষ অধিকার। এখন ‘এক দেশ, এক আইন’-এর সমর্থকদের হাতে সেই রক্ষাকবচের ভবিষ্যৎ প্রশ্নচিহ্নের সামনে।