সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ছিল এতদিন। তবে এই কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বেশ কিছুদিন উত্তাল ছিল জাতীয় রাজনীতি। অবশেষে সোমবার ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে দিল মোদী সরকার। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টে আইনি পরীক্ষার মুখে পড়তে চলেছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রাক্তন আইএএস শাহ ফয়সলের তৈরি নতুন রাজনৈতিক দল জম্মু-কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে। দলের নেত্রী শেহলা রশিদ বলেন, ‘‘আমরা এ দিনের রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাব।’’ শেহলার মতে, ‘‘এই পদক্ষেপ সংবিধান নিয়ে ধোঁকাবাজি।’’
মোদী সরকারের যুক্তি, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদেই রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তিনি যে কোনও সময় এই অনুচ্ছেদ রদ করে দিতে পারেন। কারণ এই অনুচ্ছেদ অস্থায়ী। আজ তাই ৩৭০ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা কাজে লাগিয়েই রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক নির্দেশিকা জারি করেছেন। সংবিধানের ৩৬৭ অনুচ্ছেদে অন্য অনুচ্ছেদগুলি কী ভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা বলা হয়। রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকায় সেই ৩৬৭ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংবিধান সভাকে ‘জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা’ বলতে হবে। সরকারের ব্যাখ্যা, জম্মু-কাশ্মীরে এখন বিধানসভা নেই। বিধানসভার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতি ওই নির্দেশিকা জারি করেছেন।
প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদকে কাজে লাগিয়েই ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘মারাত্মক ত্রুটি’ রয়েছে। তিনি তা খোলসা করতে রাজি হননি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভে পাশ হলেও কয়েক কিলোমিটার দূরে গণতন্ত্রের আর একটি স্তম্ভে এর পরীক্ষা হবে।’’ বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জবাব দিয়েছেন, ‘‘কিছু বেসরকারি সংস্থা আদালতে যাবে জানি। কিন্তু আমরা সব বাধা কাটিয়ে ফেলব।’’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পি ডি টি আচারিয়া এই নির্দেশিকা মানছেন না। তাঁর মতে, সংবিধানের এই নির্দেশিকা ‘নাল অ্যান্ড ভয়েড’ বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের উচিত ছিল সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল আনা। দুই-তৃতীয়াংশর সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এই বিল পাশ করিয়ে, ৫০ শতাংশ রাজ্যের অনুমোদন নিয়ে সংবিধান সংশোধন হতো। তারপরে রাষ্ট্রপতি কোনও নির্দেশিকা জারি করতে পারতেন। বিল ছাড়া রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা অকার্যকর।’’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ সমরাদিত্য পাল বলেন, ‘‘৩৭০(৩) ধারা যে সাময়িক, তা সংবিধানেই বলা রয়েছে।’’ দেশের রাষ্ট্রপতি কি কোনও নির্দেশ জারি করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করতে পারেন? সমরাদিত্যবাবু বলেন, ‘‘সংবিধানেই বলা রয়েছে, তিনি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা করতে পারেন। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি তাঁর সেই ক্ষমতা ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’
প্রবীণ আইনজীবী অমরেন্দ্র শরণের যুক্তি, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার আগে বিধানসভায় আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল। এ ভাবে তা পাশ করানো যায় না। বিধানসভা থেকে এই প্রস্তাব সংসদে আনার প্রয়োজন ছিল। আদালতে চ্যালেঞ্জ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ জারি করা বা খারিজ করে দেওয়ারও ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে।’’ পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মতো অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমেই জম্মু-কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল।
প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভের মতে, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ করে দেওয়া হয়নি। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে যে সব ব্যবস্থা ছিল, সেগুলি রদ করা হয়েছে। যেমন ওই ধারায় বলা ছিল, রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকার মাধ্যমে ৩৭০ অনুচ্ছেদের ব্যবস্থা তৈরি হবে। তাই ১৯৫৪-র রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকার মাধ্যমে ৩৫এ অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। আজ নতুন নির্দেশিকা এনে পুরনো নির্দেশিকা বাতিল করে দেওয়া হল।’’
৩৫এ অনুচ্ছেদেই বলা ছিল, জম্মু-কাশ্মীরের বাইরের কেউ সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি পাবেন না। জমিজমা কিনতে পারবেন না। কিন্তু একইরকম নিয়ম উত্তরাখণ্ড, হিমাচল থেকে অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের মতো রাজ্যগুলিতেও রয়েছে। সেখানেও বাইরের কেউ জমি কিনতে পারেন না। অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের নাগাল্যান্ড, মিজোরামের অনেক অংশে যেতে আলাদা অনুমতি নিতে হয়। মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবের প্রশ্ন ‘‘এর পর কি বিজেপি শাসিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্যও বিশেষ নিয়ম তুলে দেবে?’’ তাঁর মতে, অস্থায়ী হলেও রাজ্যের বাসিন্দাদের ইচ্ছে ছাড়া ৩৭০ অনু…