এনআরসি নিয়ে বারবারই বিরোধীতা করে এসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনআরসি লাঘু হলে তা যে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে তার আঁচ আগেই পেয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী। এইবার আসামের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা অসম রাজ্য নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতির সভাপতি তপোধীর ভট্টাচার্য। এমনকি তার সঙ্গে বাংলাকেও সতর্ক করলেন তিনি।
রবিবার ভারত সভা হলে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বিরোধী যুক্তমঞ্চ–এর নাগরিক অধিকার রক্ষা কনভেনশনে তিনি ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ’ সম্পর্কেও বাংলার মানুষকে সতর্ক করে দেন। লোকসভা নির্বাচনকে প্রহসন বলে বর্ণনা করে তপোধীরবাবু এদিন প্রথম থেকে বিজেপি–র কড়া সমালোচনা করেন। হিটলারকে নরেন্দ্র মোদি–অমিত শাহদের ‘আদি গুরু’ বলে বর্ণনা করে বিজেপি–র বিভেদের রাজনীতি সম্পর্কে বারবার সাবধান করার চেষ্টা করেন বাংলার মানুষকে। অসমের এনআরসি নিয়ে তাঁর সাফ কথা, ‘সংবিধান বিরোধী, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিরোধী, সভ্যতা বিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র আসামেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকবে না।’
বাংলার মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভাজনের খেলা চলছে। শ্যামবাজারের সঙ্গে গড়িয়াকে লড়িয়ে দিতে চায় ওরা। বাঙালির মধ্যে বিভাজন চাইছে।’ ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান নিয়েও বিভাজন রাজনীতির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
আসামের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তপোধীরবাবু জানান, আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। এনআরসি নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে মনোরোগ বাড়ছে বলেও উল্লেখ করে তিনি জানান, হিন্দু বাঙালিরাও বিজেপি–র আমলে হিংসার শিকার। তবে একইসঙ্গে তিনি ফের বলেন, বাঙালি বাঙালিই। হিন্দু বা মুসলিম দিয়ে ভাগ করা যায় না। তাঁর সাফ কথা, ভারতে বাঙালির অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে। অসমের অভিজ্ঞতা থেকে এখনই সচেতন না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকারটুকুও কেড়ে নিতে চাইছে বলেও এদিন তিনি সবাইকে সতর্ক করে দেন।
এদিনের কনভেনশেন গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আসামে এনআরসি ছুট সবাইকে নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালুর প্রস্তাব বাতিল করতে হবে। রাজ্য বিধানসভায় এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় প্রস্তাব পাশেরও দাবি করা হয়। সেইসঙ্গে ১৫ আগস্ট রাখিবন্ধন ও পদযাত্রার ডাক দেন যুক্তমঞ্চের নেতারা। এনআরসি নিয়ে যে চরম আবহাওয়া তৈরি হয়ে আছে তার আঁচ থেকে বাঁচাতে আহ্বান জানিয়েছেন তপোধীর।