কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা বেনামি লেখা ভেসে বেড়াচ্ছে। যার মূল কথা হল – চিত্রসাংবাদিকদের প্রেস ক্লাবের সদস্য করা উচিৎ নয়। ভেবেছিলাম, কোন বেনামি লেখার প্রতিবাদে কিছু লিখবো না। কারণ একটা ওপেন ফোরামে নিজের নাম জানিয়ে বক্তব্য পেশ করার যার সৎসাহস নেই তার কোন কথার জবাব দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু শেষমেশ লিখতে বাধ্য হলাম। কারণ দুটো, এক – এই লেখাটাতে নার্স, মুহুরি, প্রুফ রিডার ইত্যাদি পেশার প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন অবজ্ঞা রয়েছে যার প্রতিবাদ জানানো দরকার। প্রতিটি পেশার মানুষই নিজের নিজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব পালন করে চলেন। তাদের সবাইকে নিয়েই গড়ে ওঠে একটা ব্যবস্থা। একটাকে বাদ দিলে আরেকটার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। নার্স এবং ডাক্তার, মুহুরি এবং উকিলের নিশ্চয়ই তফাৎ আছে কিন্তু তা এভাবে তুলনার মাধ্যমে মনে করিয়ে দেওয়াটা আদ্যন্ত কুরুচি এবং অশিক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া বেনামি লেখকের দেওয়া তুলনাগুলির মত সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের কাজের মধ্যে পেশাগত দূরত্ব প্রায় নেই বললেই চলে।
![ইয়ে দোস্তি হম নহি তোড়েঙ্গে... অশোক মজুমদার 2 67717738 921719798176568 7890783739494531072 n](https://ekhonkhobor.com/wp-content/uploads/2019/08/67717738_921719798176568_7890783739494531072_n.jpg)
আমরা চিত্রসাংবাদিকরা কিন্তু কখনোই প্রেস ক্লাব, কলকাতার সদস্য হওয়ার জন্য বায়না করিনি। আমরা শুধু মনে করিয়ে দিতে চেয়েছি একটা সাধারণ সত্য, যে দেশের কোন প্রেস ক্লাবে চিত্রসাংবাদিকদের এভাবে ক্লাবের সদস্যপদ না দেওয়ার নজির নেই। দেশের সব প্রেস ক্লাবেই সাংবাদিক এবং চিত্রসাংবাদিকরা সমানভাবে সদস্য হতে, ভোট দিতে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হতে পারেন। তাহলে প্রেস ক্লাব, কলকাতায় সে নিয়ম থাকবে না কেন? বারবার বলার পরেও আগে ছিলনা মার্কা একটা পিন আটকে যাওয়া ফাটা রেকর্ড বাজানো হবে কেন? এটা দাবি নয় শুধু অনুরোধ মাত্র। আমাদের মনে হয় শুধু চিত্রসাংবাদিক কেন, প্রেস ক্লাবে সাব এডিটরদেরও সদস্যপদ দিতে বাধা কোথায়? বহু সাংবাদিক প্রথমদিকে সাব এডিটর হিসেবেই কাজ করেছেন। তাদের কাজের গুরুত্বও সাংবাদিকদের চেয়ে কম নয়।
লেখাটা থেকেই জানলাম, বাংলার প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবুও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতই চিত্রসাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্যপদ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা মানা হয়নি। যে কোন কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ যে পরামর্শ দেবেন প্রয়াত ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তাই করেছেন। আমরা ক্লাবের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য একটা ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এটা মোটেই কোন ‘অনধিকার আবেদন’ নয়, এবং তা না মানার মধ্যে হাস্যকর গোঁড়ামি ছাড়া কোন গর্ব নেই।
এডিটরস গিল্ড, আইজেএ, এনইউজেআই ইত্যাদির সঙ্গে প্রেস ক্লাবের যে সাযুজ্য বেনামি লেখক আবিষ্কার করেছেন তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এই হাস্যকর তুলনা ক্লাবের বর্তমান কর্মকর্তারা মানবেন তো? অবশ্য তিনি তো ক্লাবকর্তাদেরও আখের গোছানোর জন্য চিত্রসাংবাদিকদের এ ব্যাপারে মদত দিচ্ছেন বলে অভিযুক্ত করেছেন। আমাদের একটা সামান্য আবেদনকে ঘিরে এতটা অসহিষ্ণুতা ও বিদ্বেষ সত্যি ভাবার বিষয়! আমাদের আবেদন কেউ না মানতেই পারেন কিন্তু অনুগ্রহ করে তাকে অনৈতিক বলার ঔদ্ধত্য দেখাবেন না। আমরা কোন রাজনীতির সাহায্য নিইনি, নেওয়ার দরকারও নেই। শুধু নিজেদের অধিকারের কথা এখনকার ক্লাবকর্তাদের মনে করিয়ে দিয়েছি। মানা না মানা তাদের ব্যাপার।
লিখতে লিখতেই মনে পড়ে গেল, আজ বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস। আমরা চিত্রসাংবাদিকরা তো সাংবাদিকদের বন্ধুই। প্রতিদিন একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমরা লড়াই করি। ভালো-মন্দ সব অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিই। এটা কিন্তু কোন দিনক্ষণ, তিথি নক্ষত্র দেখে হয়না। কাজের অবস্থা ও পরিবেশেই সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকরা এক পরিসরে চলে আসেন। একইসঙ্গে একই গাড়িতে আমরা অ্যাসাইনমেন্টে যাই, সাংবাদিক মার খেলে চিত্রসাংবাদিকরা কিন্তু পালিয়ে যান না, তাকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অসংখ্য। আবার চিত্রসাংবাদিক আক্রান্ত হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাংবাদিক বন্ধুরা। আড্ডা, অ্যাসাইনমেন্ট, আশা, হতাশা দিনের পর দিন আমরা একসঙ্গে ভাগ করে নিই। খোঁজ নিয়ে দেখুন আমাদের অনেকের সঙ্গে অনেক সাংবাদিক বন্ধুর সম্পর্ক নিছক পেশাগত নয়, তা এক পারিবারিক বন্ধুত্ব।
কোন অকারণ রাজনীতি নয়, খোলামেলা আলোচনার মধ্যে দিয়েই যেকোন ব্যাপারে সমাধানে পৌঁছানো যায়। চিত্রসাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে বিগত কয়েকবছর ধরেই আমরা নানা ফোরামে সরব। সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিক বন্ধুদের অনেকেই আমাদের সমর্থন করেন, বিরোধিতাও আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা আমাদের বক্তব্য স্বনামেই বলি। কারণ, সোজা কথা সোজাভাবেই বলা ভালো। নিজের নামে যে কথা বলতে পারবো না সে কথা বলা উচিৎ নয়। সোজা কথায় সমস্যা মেটে, ঘুরিয়ে নাক দেখালে সমস্যা জটিল হয়। বন্ধুত্ব দিবসের দিন একটা কথা জানিয়ে শেষ করি – আমাদের অনুরোধটা যতই নানা প্রসঙ্গ তুলে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হোক না কেন সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের বন্ধুত্বে কোন চির ধরবে না। তা আমরা ক্লাবের সদস্যপদ না পেলেও।
ইয়ে দোস্তি হম নহি তোড়েঙ্গে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত