রাজ্যসভায় অন্যান্যদল গুলোর মতো তুলনায় সাংসদ সংখ্যা কম। তাই তাঁদের বিরোধিতায় যে কোনো বিল পাশ হতে আটকাবে না সেটা জানেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারপরও নেত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রের বিরোধিতা থেকে সর্বদা অনড় থেকেছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদরা। পুরো ১০০ শতাংশ ভোটই পড়েছে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিপরীতে। যা সত্যিই নজিরবিহীন। এই একনিষ্ঠতা একমাত্র তৃণমূলেরই আছে সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন তাবড় তাবড় রাজনীতিবিদরা।
তৃণমূল শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটই তৃণমূল নেত্রীর কাছে পাখির চোখ। তাই সমস্ত স্তরেই বিজেপি বিরোধিতার বার্তাকে উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে চাইছেন তিনি। চলতি সংসদ অধিবেশনেও সেটার জন্য গোড়া থেকেই সতর্ক ছিলেন। সংসদে সেটাই করেছে দল।
রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, “আমাদের নেত্রীর সংসদীয় অভিজ্ঞতা ২৫ বছরের। তাঁর নির্দেশে অন্যান্য বিরোধী আঞ্চলিক দলকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি, সংসদীয় কমিটিতে না-পাঠিয়ে যে ভাবে গায়ের জোরে বিল পাশ করানো হচ্ছে তা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের নীতিবিরুদ্ধ। বিজেপি যাতে পরে বলতে না-পারে, এই বিলগুলি নিয়ে আমাদের আপত্তির কোনও জায়গা ছিল না, এই কারণেও এর প্রতিবাদ করা দরকার। মোদী সরকার যাতে বিলগুলি সর্বসম্মত ভাবে পাশ করাতে না-পারে, তার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে।’’
অভিযোগ উঠেছে, সিবিআই-ইডি-র চাপ দিয়ে সমঝোতা করতে বাধ্য করানো হয়েছে বিরোধীদের। তৃণমূলের বক্তব্য, সারদা-রোজ ভ্যালির মতো কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে আগাগোড়া চাপ বজায় রেখে যাচ্ছে শাসক দল। একের পর এক সাংসদের কাছে চিঠি যাচ্ছে দেখা করার জন্য। সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার না-করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিরোধিতার লাইন বজায় রেখেছে দল। ডেরেকের কথায়, ‘‘ইডি ও সিবিআইয়ের হুমকি বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে প্রতি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে সঙ্ঘবদ্ধ করেছে। এ বারের অধিবেশনও আমরা বিরোধীদের পথ দেখিয়েছি।’’
প্রসঙ্গত, গত দেড় সপ্তাহ ধরে রাজ্যসভায় উপস্থিতির জন্য হুইপ জারি করে রাখা হয়েছিল তৃণমূলের পক্ষ থেকে। হুইপ কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন তালাক, তথ্যের অধিকার অথবা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিল—কোনও ক্ষেত্রেই ভোটাভুটির সময় কংগ্রেস সদস্যদের ১০০% হাজিরা দেখা যায়নি। বিএসপি, এসপি, এনসিপি-র মতো আগমার্কা বিরোধী দলগুলির প্রায় অর্ধেক ভোট কখনও গিয়েছে সরকারের ঝুলিতে, কখনও কৌশলগত ভাবে অনুপস্থিত থেকে তারা শাসক পক্ষেরই সুবিধা করেছে।