গত মাসের ২৭ তারিখ ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই ত্রিপুরার ৮৬ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল বিজেপি। যে কারণে সেখানে নির্বাচনের নামে কার্যত প্রহসন হয়েছে বলে দাবি করেছিল বিরোধী দলগুলি। উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগও। তবে এবার ত্রিপুরার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলকে বিজেপির সমস্ত রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ‘অনুকরণীয়’ হিসেবে দেগে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
হ্যাঁ, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে রাজ্যের মোট ৬৬৪৬টি আসনের মধ্যে ৬৪৪১টি আসনে বিজেপির এই জয়কে ‘উন্নয়নমূলক রাজনীতির ক্ষমতা’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। অন্য রাজ্যের কর্মীদের ত্রিপুরার কার্যকর্তাদের কাছে শেখার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ত্রিপুরার এই পঞ্চায়েত নির্বাচন কী ভাবে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কি তা জানেন? নাকি জেনেবুঝেই রাজ্যে রাজ্যে দলীয় কর্মীদের বিরোধী-শূন্য নির্বাচন করার নির্দেশ দিলেন তিনি!
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরার পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক প্রথম থেকেই। মনোনয়ন জমার পর্বে বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস, এমনকী শাসক বিজেপির জোট শরিক আইপিএফটি-ও লাগাতার অভিযোগ জানিয়েছে, তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার মনোনয়ন নিয়ে বিজেপির মধ্যেই আদিদের সঙ্গে নব্যদের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। কিছু কিছু জায়গায় নব্যদের সঙ্গে বিরোধে আদিরা মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে মারধর খেয়ে ফিরেছেন। তাঁদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে।
সবমিলিয়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভয়ে বহু জায়গায় মানুষ ভোটে দাঁড়াতেই ভরসা পাননি। এবং শেষমেশ মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, সমস্ত রেকর্ড ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন ত্রিপুরার বিজেপি নেতৃত্ব। সেখানে বিজেপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই জিতে নেয় ৮৬ শতাংশ আসন। তারপর গত ২৭ জুলাই বাকি ১৪ শতাংশ আসনে ভোট নেওয়া হয়। সে দিনও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। এমনকী ভোট গণনার সময়েও একাধিক জায়গায় গণনা কেন্দ্রগুলি থেকে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
অতঃপর ভোটের ফলাফল বেরনোর পর দেখা যাচ্ছে, যে ৯৯৪টি আসনে ভোট হয়েছিল তার মধ্যে ৭৮৯টি আসনই বিজেপির দখলে। শতাংশের হিসেবে ৭৯.৩৭। আর ভোট হওয়া আর না হওয়া, মোট আসনের নিরিখে ৯৬.৯১ শতাংশ আসন একা বিজেপির! প্রধান বিরোধী দল সিপিএম নেমেছে তিন নম্বরে। মোট ১৬৬টি আসন পেয়ে কংগ্রেস দু’নম্বরে। আর শাসক জোটের ছোট শরিক আইপিএফটি গ্রাম পঞ্চায়েতে মাত্র ৬টি আসন পেয়ে চতুর্থ। এমন ‘কলঙ্কিত’ আর ‘সন্ত্রাসের’ নির্বাচনকেই কিনা এবার ‘অনুকরণীয়’ ভোট বলছেন প্রধানমন্ত্রী! যা নিয়ে মোদীর সমালোচনায় সরব বিরোধীরা।