প্রথম মোদী সরকারের আমল বারবারই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েছে এ রাজ্য। সেই ধারা বজায় রয়েছে মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসেও। তাদের পেশ করা প্রথম সাধারণ বাজেটে বাংলার জন্য কোনও বিশেষ প্রকল্পের ঘোষণা তো হয়ইনি, বরং রাজ্যের বেশ কিছু চলতি প্রকল্পে বরাদ্দ শুন্য করে দেওয়া হয়েছে। এমনকী রেল বাজেটেও বাংলায় ‘বঞ্চনা এক্সপ্রেস’ ছুটিয়েছে মোদী সরকার। আর এবার দেখা গেল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটনের ঢালাও প্রচারের কর্মসূচীতেও ‘ছাগলের তৃতীয় সন্তান’ বাংলা। দেশে যাতে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ে, সেদিকে নজর দিয়ে মোট ৭১টি ফিল্ম তৈরি করেছে কেন্দ্রের পর্যটন মন্ত্রক। সেই শর্টফিল্মগুলিতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে হরেক রাজ্য। তবে ব্রাত্য এক্ষেত্রে ফের বাংলাই। হ্যাঁ, একটি শর্টফিল্মেও রূপসী বাংলাকে আলাদা করে তুলে ধরার চেষ্টা করেনি মোদী সরকার।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় আসার পরই শিল্প-স্বাস্থ্য-শিক্ষাক্ষেত্রের মতো বাংলার পর্যটনকেও ঢেলে সাজার উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরের দার্জিলিং থেকে দক্ষিণের সুন্দরবন পর্যন্ত যেমন বিভিন্ন জায়গায় পরিকাঠামো গড়া ও সৌন্দর্যায়নের কাজ চলেছে, তেমনই নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে অতিথি আবাসগুলিও। শুরু হয়েছে নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্রকে সামনে আনার প্রক্রিয়াও। রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে শাহরুখ খানকে তুলে ধরা হয়েছে পর্যটনের প্রচারেই। তবে রাজ্যের এ হেন ভোলবদলের ছবি খুব একটা সামনে আনতে আগ্রহী নয় বিজেপি সরকার। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পর্যটন দফতরের কলকাতার আঞ্চলিক অফিস থেকে বাংলাকে তুলে ধরার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও, কেন্দ্রীয়ভাবে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা চলছেই, বলছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, পর্যটনকে সামনে রেখে যে ৭১টি ফিল্ম তৈরি হয়েছে, সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লী, গোয়া, উড়িষ্যা, গুজরাত, রাজস্থান, কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে। হিমাচল প্রদেশ বা উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলিও ঠাঁই পেয়েছে সেই তালিকায়। আছে খাওয়াদাওয়া, স্বচ্ছতা, যোগ, ক্রুজের মতো বেশ কিছু থিম ভিত্তিক ভিডিও। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যটন চ্যানেলে সেগুলি সম্প্রচারিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পৌঁছেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। আমেরিকা, লন্ডন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, স্পেন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং আরবের দেশগুলিতে যত্ন নিয়ে দেশীয় পর্যটনের প্রচার সেরেছে কেন্দ্র। তবে সেসবে বাকি রাজ্যের মতো বাংলার নিজস্বতাকে আলাদা করে তুলে ধরার প্রয়োজন বোধ করেনি তারা।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক গত আর্থিক বছরের রিপোর্ট পেশ করেছে সম্প্রতি। সেখানেই তারা জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে তাদের অন্যতম উদ্যোগ ছিল ‘আইকনিক ট্যুরিস্ট সাইট’ নামে একটি প্রকল্পকে তুলে ধরা। সেখানে মোট ১৭টি জায়গাকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় উত্তরপ্রদেশ, দিল্লী, মহারাষ্ট্র, গোয়া, রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, আসাম, তামিলনাড়ু, কেরলের একাধিক পর্যটনকেন্দ্রকে রাখা হয়েছে। সেখানেও জায়গা হয়নি বাংলার। যা দেখে সংশ্লিষ্ট মহলের মত, পর্যটনের উন্নয়নে কেন্দ্র যদি নিজেই রাজ্যগুলির পর্যটনের প্রচারের দায়িত্ব নেয়, তাহলে সেখানে সবার জন্য সমান মনোভাব থাকবে, এটাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সেখানে খামতি রেখেই চলেছে কেন্দ্র, এমনটাই অভিযোগ।