মাস খানেক আগেই বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবানী বর্তমান মোদী-শাহদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, বিরোধীদের ভিন্নমতকে সম্মান জানানোটাই প্রকৃত গণতন্ত্র। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বৈচিত্রকে সম্মান জানানোই ভারতীয় গণতন্ত্রের সম্পদ। যাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল গেরুয়া শিবিরকে। আর এবার মোদী সরকারকে গণতন্ত্রের সার কথাটি মনে করিয়ে দিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখায় ‘দেশদ্রোহী’, ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ তকমা জুটেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তির। এমন আবহেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মনে করালেন, শাসকদলগুলির মনে রাখা উচিত তারা যত বেশি আসনসংখ্যা নিয়েই ক্ষমতায় আসুক না কেন, শতকরার হিসেব করলে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই কিন্তু তাদের ভোট দেননি। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠই তাদের সমর্থক নন। কিন্তু তাদের সঙ্গে নিয়ে চলাটাও গণতন্ত্রের বিধান, জানান প্রণব।
কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)-এর রাজস্থান শাখা আয়োজিত এক সেমিনারে প্রণব বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ইতিহাসে এর আগে একাধিকবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে শাসকদল। তবে অদ্ভুতভাবে, সে সব ক্ষেত্রে আসনসংখ্যার নিরিখে কোনও একটি দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে থাকলেও এমন এক বারও হয়নি যে ভারতীয় ভোটারদের অর্ধেকেরও বেশি একটি কোনও দলকে ভোট দিয়েছেন। না কংগ্রেস এমন ভোট পেয়েছে, না অন্য কোনও দলের ক্ষেত্রে হয়েছে। এমনকী বিজেপিও এর ব্যতিক্রম নয়।’
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩০৩টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভোটের হার দেখতে গেলে তা কিন্তু ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। এমনকী ১৯৮৪ সালে যে ভাবে বিরোধীদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতায় এসেছিল রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস, তাদেরও ভোটের হার কিন্তু ৫০ শতাংশ পেরোয়নি।
ভারতের গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিতে গিয়ে প্রণববাবু বলেন, ‘এ দেশের পরিষদীয় ব্যবস্থা মোটেও হঠাৎ করে তৈরি হয়নি, ব্রিটিশদেরও অবদান নয়। আমজনতা, তাঁদের লড়াই, আন্দোলন ও কষ্টের ফল এটি।’ সেই গণতন্ত্রে সকলকে নিয়ে চলাটাই যে দস্তুর সে কথাটা এই অশান্ত সময়ে সরকারকে মনে করিয়ে দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।