চারদিকে কান পাতলে এখন একটাই কথা, সেটা হল তিন তালাক। কারণ, এই মুহূর্তে তিন তালাক নিয়েই উত্তাল গোটা দেশের রাজনীতি। তবে এই তিন তালাক বিলে যে আদতে কোনও লাভই হল না, এমনটা মনে করছেন বিশিষ্ট অধ্যাপক মীরাতুন নাহার, সাহিত্যিক আবুল বাশার।
মুসলিম মহিলাদের কতটা সহায়তা করবে এই তিন তালাক বিল? আদৌ কোনও সুরাহা হল কি? এমনই প্রশ্ন তুলছেন আবুল বাশার। ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল’ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের এই লাইনটির সঙ্গে তিন তালাক বিলের মিল খুঁজে পাচ্ছেন বাশার। তাঁর মতে, তিন তালাক ‘ছিল দেওয়ানি আইন, হয়ে গেল ফৌজদারি আইন!’ এতে আখেরে কোনও উপকারই হবে না ‘ফুলবউ’দের! পাশাপাশি বিলটিকে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানালেন তিনি।
বাশার বলেছেন, “এই আইনের মধ্যে কিছু জটিলতা থেকে গিয়েছে। বিয়ে বিচ্ছেদ দেওয়ানি আইনের অন্তর্গত ছিল। কিন্তু এই বিলের মধ্যে দিয়ে দেওয়ানি আইনটা ফৌজদারি আইন হলে গেল। বিচ্ছেদের জন্য পানিশমেন্ট হতে পারে না। পুরুষ যদি জেল খাটে তাহলে একজন নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব কীভাবে নেবে? তাই দেওয়ানি আইনকে ফৌজদারি আইন করা যায় কিনা এই নিয়ে আমার প্রশ্ন থেকে গেল।”
বাশার আরও বলছেন, “এই বিলের মধ্য দিয়ে মোদীর মুসলিম বিদ্বেষ আরও প্রকট হয়েছে। মোদী সরকার কি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অপরাধী জাতিতে পরিণত করতে চাইছে? মুসলমানদের উপর কোনও ঘৃণা আছে কি তাঁর? অন্য কোনও ধর্মে এমনটা হয় না। তিন তালাকের ক্ষেত্রে মুসলিম পুরুষকে জেল খাটতে হবে? আমার মূল বক্তব্য, সমাজের সব ধর্মের মানুষের জন্য এক আইন হওয়া উচিৎ। না-হলে সমাজের মূল ভিত্তি নষ্ট হয়ে যাবে।”
বাশারের মত এই একই বক্তব্য মীরাতুন নাহারেরও। তিনি বলেন, “ কিন্তু কোনও আইনের অন্তর্ভুক্ত হবে তিন তালাক, সে বিষয়ে আমি সহমত পোষণ করতে পারছি না। ফৌজদারি আইনের অন্তর্ভুক্ত হবে এই অন্যায়। অর্থাৎ তিন তালাকের জন্য সাজা হবে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী– এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।। কারণ, ফৌজদারি আইন অনুযায়ী অপরাধীর সাজা হলে, যে মেয়েটি তাৎক্ষণিক তিন তালাক পেয়েছে– তার কোনও উপকারে আসবে না। উল্টে, তার জন্য ক্ষতিকারক হবে। কেননা, আমাদের দেশে আইনের দারস্থ হতে পারে খুব কম মানুষ।” মীরাতুন দেবী মনে করেন, এই আইন আদতে মুসলিম নারীদের কোনও কাজেই লাগবে না। তবে লোকসভা যদি ব্যাপারটি একটু বিবেচনা করে দেখে, তাহলেই উপকৃত হতে পারেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু নারী।