১৭ তম লোকসভার প্রথম অধিবেশন বসা ইস্তক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে প্রায় রোজই কোনও না কোনও বিল পাশ করিয়ে নেওয়ার যে ট্রেন্ড শুরু করেছে মোদী সরকার। পাশাপাশি, বিরোধীদের আঁধারে রেখেই সংসদের কার্যসূচীও রাত ৯টার পর বদলে যাচ্ছে সংশোধিত কার্যসূচীতে। সাংসদেরা রাত ১০টায় বাড়ি ফিরে দেখছেন পরের দিনের আলোচ্য বিল পাল্টে গিয়েছে! এই বিষয়টি নিয়ে এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিল তারা। তার ওপর গতকাল বিল নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হল, তখন দেখা গেল, মন্ত্রীমশাই নিজেই হাজির হননি। নেই তাঁর প্রতিমন্ত্রীও। যা নিয়ে বেজায় বিরক্ত বিরোধীরা।
দুপুর তখন দুটো। মধ্যাহ্নভোজের পর ফের শুরু হচ্ছে রাজ্যসভার অধিবেশন। জাতীয় মেডিক্যাল বিল নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনই নেই। প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবেও উধাও। বিরোধী শিবিরও অনেক পাতলা। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বিষয়টি নজর করেই হইচই শুরু করলেন। রাজ্যসভায় বিজেপির দলনেতা, সামাজিক ন্যায়মন্ত্রী থাওরচন্দ্র গহলৌত বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘আমি তো আছি।’ কিন্তু নাছোড় বিরোধীরা। যার ফলে দশ মিনিটের জন্য বন্ধ করতে হয় অধিবেশন।
বাংলার দেবশ্রী চৌধুরীকে দেখিয়ে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘এই দেখুন আর একজন মন্ত্রী তো আছেন!’ কিন্তু বিরোধীরা বললেন, ‘তাতে কী? যে মন্ত্রকের বিল, তার মন্ত্রী কোথায়?’ গহলৌত বার্তা পাঠালেন। কিছুক্ষণ পর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন হর্ষবর্ধন, সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী। সকলকে শুনিয়েই তাঁদের বেজায় ধমক দিলেন গহলৌত, ‘হচ্ছেটা কী? আপনাদের বিল আর আপনারাই নেই?’ কাঁচুমাচু মুখে হর্ষবর্ধন বোঝালেন, ‘এই একটু দেরি হয়ে গেল আর কী!’ গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এমনই নাটকের পর এবার বিরোধীদের পাশাপাশি বিরক্ত শাসক দলের সাংসদদের একাংশও।
প্রসঙ্গত, তিনশোর বেশি আসন নিয়ে ফের জিতে আসার পর সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ বাড়িয়ে যে ভাবে একের পর এক বিল পাশ করাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, তাতে শুধু বিরোধী নয়, শাসক শিবিরেও নাজেহাল অবস্থা। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী শুনিয়ে রেখেছেন, দরকার হলে আরও বাড়বে সংসদের অধিবেশন। এতে সকলেরই মাথায় হাত। সপার মুলায়ম সিং যাদব যেমন লোকসভায় বলেন, ‘ঢের হয়েছে। অধিবেশন আর কত বাড়াবে সরকার? কেউ বিয়েবাড়িও যেতে পারছেন না।’
আবার বিজেপির এক মন্ত্রীর বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘মন্ত্রকের কাজ করতে হবে, সংসদ সামলাতে হবে, নির্বাচনী কেন্দ্রও দেখতে হবে। সকলের বয়স হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কারও কথা বোঝেন না, শোনেনও না।’ আর এক মন্ত্রীর রসিক মন্তব্য, ‘আজই কংগ্রেস বলেছে, সংসদের অধিবেশন শেষ হলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে নতুন সভাপতি খুঁজবে। প্রধানমন্ত্রী জানতে পারলে অধিবেশন শেষই করবেন না।’ আদতে সেটাই হচ্ছে। একপ্রকার সরকার গায়ের জোরেই সংসদ বাড়াচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিল পাশ করাচ্ছে। কিন্তু কোন দিন কী বিল আনবে, তা আচমকাই এক রাত আগে স্থির করছে। ফলে বিরোধীরা বিল নিয়ে প্রস্তুত হয়েও আসতে পারছেন না।
অন্যদিকে, এই সপ্তাহে শাসক দলের সাংসদদের শনি-রবির ছুটিও কেড়ে নিয়েছেন মোদী। দু’দিনই সকালে প্রাতরাশ থেকে নৈশভোজ পর্যন্ত বিজেপি সাংসদদের প্রশিক্ষণ হবে। সভাপতি অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সকলকে থাকতেই হবে। কোনও বাহানা চলবে না।’ বিজেপির এক সাংসদের বক্তব্য, ‘পরিবারে লোক অসুস্থ, তবু ছুটি পাব না। এভাবে আর কত দিন? প্রধানমন্ত্রীর না হয় পরিবার নেই, আমাদের তো আছে। আর আমাদের সংসদে থাকতে বলে প্রধানমন্ত্রী তো আসেন না!’ এর থেকেই স্পষ্ট, অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোয় মোদীর ওপর যেমন খাপ্পা বিরোধীরা। তেমনি বেজায় বিরক্ত বিজেপি সাংসদরাও।