মহা সমারোহে উদযাপিত হল ইস্টবেঙ্গলের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান। গতকাল নেতাজি ইন্ডোরে ঠিক যেন চাঁদের হাট বসেছিল। ইস্ট বেঙ্গলের শতবার্ষিকী উৎসবের অন্যতম চমক ছিলেন মহম্মদ হাবিব। ক্লাব কর্তাদের বিশেষ অনুরোধে পরিজনদের সঙ্গে তিনি কলকাতায় আসেন। বিকেলে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছয়ের দশকের দুই খেলোয়াড় হাবিব ও সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে সাংবাদিকরা মুখোমুখি হয়েছিলেন শতবর্ষে ইস্ট বেঙ্গলের জীবনকৃতি সম্মান পাওয়া দুই ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ও ভাস্কর গাঙ্গুলি।
বৃহস্পতিবার ইস্ট বেঙ্গলের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি করেন মহম্মদ হাবিব। তিনি বলেন, ‘১৯৭০ সালের লিগ থেকে ১৯৭৪ সালে জানুয়ারিতে ডুরান্ড সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত লাল-হলুদের জার্সি গায়ে টানা ১৪৩২ মিনিট অপরাজিত ছিলাম। সেটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় অ্যাচিভমেন্ট। ফুটবল জীবনে অনেক রেকর্ড আছে। কিন্তু আমার কাছে এই রেকর্ডের মূল্য সবথেকে বেশি। ইস্ট বেঙ্গলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুভূতি আলাদা। বৃহস্পতিবার উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা প্রথমে ছিল না। কর্তাদের আন্তরিক অনুরোধেই এসেছি। ১৯৬৬ সালে ইস্ট বেঙ্গলে এসেই তো প্রতিষ্ঠা পেয়েছি।’ ৭০ বছরের হাবিবকে কিছুটা হলেও অসুস্থ মনে হয়েছে। টানা কাথাবার্তা বলতেও ইদানীং অসুবিধা হচ্ছে তাঁর। মঞ্চে হাবিবকে গুরু পিকে’র পাশে অধিকাংশ সময়ে থাকতে দেখা যায়। ইদানীং তিনি পার্কিনসনস রোগে আক্রান্ত। তাই তাঁর চলাফেরা শ্লথ হয়ে পড়েছে।
সুভাষ ভৌমিক তাঁর প্রত্যাবর্তনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমি ইস্ট বেঙ্গলে ১৯৭৩ সালে সই করার সময়ে বিধুভূষণ ঘোষ ছিলেন শীর্ষ কর্তা। তিনি প্রতিটি ডার্বির আগে বলতেন, এবার পানিপথের প্রথম যুদ্ধ, এবার পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ। এই ভাবে বড় ম্যাচের আগে আমাদের তাতাতেন। হাবিব সব সময়ে ডার্বির আগে বলতেন, ‘ক্লাবের সম্মান, সমর্থকদের প্রত্যাশা তো আছেই সেই সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্বের কথা ভেবেও বড় ম্যাচে নামতে হবে। আমার কাছে ১৯৭৩ সালের ডার্বিগুলি ছিল বেশ চ্যালেজ্ঞের। তাই ডার্বির আগে হাবিব পার্ক স্ট্রিটের ফ্লুরিজে আকবর ও আমাকে নিয়ে বসতেন। আলাদাভাবে উদ্বুদ্ধ করতেন ‘বড়ে মিঞা’। ইস্ট বেঙ্গলের সোনার দলগুলিতে তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবক। পাশাপাশি প্রদীপদার কথাও বলতে হয়। উনি ওই বছর আমার জন্য যা করেছেন তা কখনই ভোলার নয়।’
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ‘শতবর্ষে জীবনকৃতি সম্মান পাওয়ার আনন্দ ও অনুভূতিই আলাদা। এই ক্লাবই ফুটবলার মনোরঞ্জনকে জন্ম দিয়েছে। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে যখন লিগের ম্যাচ খেলতে নামতাম তখন দর্শকদের চিৎকারে আমাদের জোশ বেড়ে যেত। মনোরঞ্জন থেকে মনা হয়েছি ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের জন্যই। গোলের পিছনে ভাস্কর থাকলে আমার খেলতে অসুবিধা হত না। একটা বোঝাপড়া ছিল।’
ভাস্কর গাঙ্গুলি বলেন, ‘ইস্ট বেঙ্গলে এসে আমার পুনর্জন্ম হয়েছে। ১৯৭৫ সালে আমি চার গোল খেয়েছিলাম। ওই বছর শিল্ড ফাইনালে পাঁচ গোলে হারের পর ভেবেছিলাম আমার কেরিয়ার শেষ। পরদিনই যোগাযোগ করেছিলেন ইস্ট বেঙ্গল কর্তারা। ওঁরা এগিয়ে না এলে ফুটবলার ভাস্কর গাঙ্গুলি হারিয়ে যেত। সামনে মনোরঞ্জন থাকলে ভরসা পেতাম।’